আজ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় বরগুনা প্রেসক্লাবের নির্বাচন

বরগুনা প্রতিনিধি : ৫ ই আগস্ট এর পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বরগুনা প্রেসক্লাবকে বৈষম্যমুক্ত ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের দখল মুক্ত করতে বরগুনার সর্বস্তরের সাংবাদিকগণ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করলেও তাতে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় আজ ২৫ ডিসেম্বর আওয়ামী এজেন্ডরা বাস্তবায়নে বরগুনা প্রেসক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বরগুনা প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি এডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের (সাধারণ সম্পাদক, বরগুনা জেলা কৃষকলীগ) ও সাধারণ সম্পাদক জাফর হোসেন হাওলাদার (সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বরগুনা) এর নির্দেশনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন বরগুনা জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি ও বরগুনা জেলা জজ কোট এর পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ নুরুল আমিন।

 

আজ ২৫ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী সাংবাদিক মাসুদ তালুকদার হত্যা মামলার চার্জশিট ভুক্ত ০১ নং আসামী এডভোকেট আ.স.ম হাফিজ আল আসাদ (সোহেল হাফিজ)। সোহেল হাফিজ ৫ আগস্ট এর পর জামায়াত নেতাদের কাছে ছাত্র জীবনে ছাত্র শিবির ও বিএনপি নেতাদের কাছে ছাত্রদল করতেন বলে জানিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সোহেল হাফিজের বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি নিজেকে খোদ আওয়ামী লীগ বলেই প্রচার করতেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ বলে প্রচার করেছেন। তিনি প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক থাকাকালীন প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে আওয়ামী সংসদ সদস্য এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু স্মৃতি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড নামে পদক প্রদানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বরগুনা শিশু আনন্দমেলা নামে যাত্রাপালার মাধ্যমে অর্থ আয় করে বরগুনা প্রেসক্লাবের চতুর্থ তলায় বঙ্গবন্ধু মিলনায়াতন করেছেন। আওয়ামী সংসদ সদস্যকে ম্যানেজ করে প্রশাসনের সহযোগিতায় বরগুনার বড়ইতলা উপকণ্ঠে উপকূল বনায়নের দশ একর সরকারি জমি দখল করে সুরঞ্জনা ইকো ট্যুরিজম এন্ড রিসোর্ট নামে একটি ব্যক্তি মালিকানা বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করেছেন। তিনি বিগত ১৬ বছরে প্রেসক্লাব থেকে বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বহিস্কার করেছেন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আবু সালেহ জাফর। তিনি বিগত বিএনপি সরকারের আমলেও যেমন সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তেমনি আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন।

বরগুনা প্রেসক্লাবের দীর্ঘ ৪৭ বছরের ইতিহাসে মাত্র ২৪ জন সদস্য। আওয়ামী লীগের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকলে বরগুনা প্রেসক্লাবে কাউকে সদস্যপদ দেয়া হয়নি। প্রেসক্লাবের যে সকল সদস্যরা আছেন তারা কোন না কোন ভাবে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত। প্রেসক্লাবের সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত সাংবাদিকতা করেন এরুপ সদস্য সংখ্যা খুবই কম।

 

গত ২২ ডিসেম্বর বরগুনা প্রেসক্লাবকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করে সকল সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত সদস্য করে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি এডহক কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বরগুনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করেন প্রেসক্লাবের বাইরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। ২৪ ডিসেম্বর প্রেসক্লাবকে স্বৈরাচারমুক্ত করে সকল সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত করতে ও নির্বাচন বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন বরগুনার সাংবাদিকবৃন্দ।

কিন্তু কেন্দ্রীয় বিএনপির একজন সহ-সম্পাদক ও স্থানীয় বিএনপি’র কিছু সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বরগুনার প্রশাসন কড়া নিরাপত্তায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের সহায়তা দিতে নির্বাচন উঠিয়ে নিয়েছে।

প্রেসক্লাবের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এখনো যদি প্রশাসন আওয়ামী লীগের সহায়তা করে তবে ৫ ই আগস্টের বিপ্লবের সুফল কোথায়? বরগুনায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকগণ বরগুনা প্রেসক্লাবকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে সকল পর্যায়ে সহযোগিতা চান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ