সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বড় ৯টি বিল ও ডোবা বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের নারকিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। গত ১৬ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন গোবিন্দপুর- মদনপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক প্রকৃত মৎস্যজীবি রফিক মিয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর মৌজাস্থিত মদনপুর গ্রামের পূর্বদিকে দেখার হাওর সংলগ্ন সরকারী খাস খতিয়ানভূক্ত ছোট বড় ৯টি বিল ও ডোবা। গ্রুপ জলমহাল গজারিয়া বিল, গরু রাখা বিল, পিচলা বিল, রওয়া বিল, চিনার ডুবি, উররাবিল বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নারকিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সরকারী খাস খতিয়ানভুক্ত ইজারাবিহীন ছোট বড় ৯টি বিল ও ডোবা জোরপূর্বক দখল করে দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন করে আসছে। এছাড়াও পাওয়ার পাম্পের সাহায্যে বাংলাধরা গ্রুপ জলমহাল শুকিয়ে মৎস্য আহরণ করছে মৎস্যজীবি সিন্ডিকেট চক্রটি। ফলে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব অপরদিকে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের মাছ। সরকারের রাজস্ব ও দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় জেলা প্রশাসকের দ্বারস্থ হন গোবিন্দপুর-মদনপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গ্রুপ জলমহাল গুলো থেকে সরকারী রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে খাস কালেকশন কিংবা সরকারের নির্দেশে কোন কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রনে রাখার দাবী জানানো হয়। মদনপুর গ্রামের আমির উদ্দিন শিক্ষক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশীয় অস্ত্রধারী বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক সরকারি ৯টি বিল ও ডোবায় বাশ,কাটা, নৌকা ও পাহাড়াদার দিয়ে তা নিজ দখলে রেখে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের বঞ্চিত করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি টাকা। ৮ লক্ষ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে অন্য একটি চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন আমির উদ্দিন গংরা। সরকারী খাস খতিয়ানের বিল ও ডোবা ওই তথাকথিত শিক্ষক আমির উদ্দিন মৎস্য নীতিমালা আইন লংঙ্গন করে কিভাবে নগদ অর্থে বিক্রী করেন এ নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে যে কোন সময় স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৯টি বিল ও ডোবা সরকারের নিয়ন্ত্রনে আনার দাবী এলাকাবাসীর।
আরও জানা যায়, এই প্রভাবশালী চক্রের মূলহোতা শিক্ষক আমির উদ্দিন ও মদনপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সেজুল মিয়া ও সাধারন সম্পাদক আব্দুন নূর গংদের বিরুদ্ধে রফিক মিয়ার ইজারা প্রাপ্ত বাংলাধরা বিলের প্রায় ৪-৫ লক্ষাধিক টাকার মৎস্য লুটের অভিযোগ রয়েছে। সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পাওয়ার পাম্প লাগিয়ে বিল শুকিয়ে মাছ নিধন করছে তারা। এ বিষয়ে তিনি তাৎক্ষনিক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে ফোন দিলে সরজমিনে উপস্থিত হলে ঘটনার সত্যতা পান ওই ভূমি কর্মকর্তা। এ সময় ভুমি কর্মকর্তা তাদেরকে মাছ ধরতে বাধা নিষেধ করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আমির উদ্দিন জানান, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বিল ও ডোবার বিষয়ে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ইসরাইল রহমানের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা অতীশ দর্শী চাকমা জানান, অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথে একজন ভুমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। সরকারী জলমহাল অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি নগদ টাকায় বিক্রি করার সুযোগ নাই। আর কেউ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমানাদি পাওয়া গেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply