আজ ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

একাধিক সংবাদ প্রকাশের পরও বন্ধ হচ্ছে না ধোপাজান নদীর বালু-পাথর উত্তোলন 

মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের ইজারাবিহিন ধোপাজান চলতি নদীতে সেনাবাহিনীর কঠোর নজরদারী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রকাশের পরও বন্ধ হচ্ছে না স্থানীয় বালু-পাথর খেকো সিন্ডিকেট চক্রের ড্রেজার মেশিন দিয়ে তীর কাটা।

৪ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা এবং ডিবি পুলিশ ধোপাজান নদীতে নিয়মিত টহলের দায়িত্বে থাকার পরও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পত্তি বালু-পাথর মহোৎসব। রাত সাড়ে ৩টায় একসাথে প্রায় শতাদিক ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডি নৌকা পঙ্গপাল নৌকায় ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা ধোপাজান নদীর তীর কেটে ও নদীর তলদেশ হতে বালি বুঝাই করে মুহুর্তের মধ্যে অবৈধ বালিবাহী স্টিলবডি ও পঙ্গপাল নামের নৌযান ও নৌকাগুলো বলতে গেলে অনেকটা বিনাবাধায় রহস্যজনক ভাবে পুলিশের সামনে দিয়ে অতিদ্রুত বেগে বের হয়ে যায়। ধোপাজান নদীতে চোরাকারবারী প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্বপালনরত প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দারা জানান,আমরা গত কয়েকদিন যাবৎ নদীতে টহলরত চেকপোস্টের পুলিশ দলের সহায়তায় নদীর পাড়ে অবস্থান করি। শনিবার দিবাগত রাত ২টার পরে ধোপাজান চলতি নদীতে তারা পুলিশের স্পিডবোটটি ভারী ষ্টিলবডি নৌকার দ্বারা সজোরে ধাক্কা মেরে একযোগে চোরাই করা বালি সহকারে নিজ নিজ ষ্টিলবডি ও ইঞ্জিন নৌকা এবং পঙ্গপাল নৌকাগুলো নিয়ে দ্রুতবেগে বের হয়ে গেছে। তারা বলেন,এর আগের দিন সেনাবাহিনী,গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ১১টি বালিভর্তি স্টিলবডি নৌকা আটক করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে এসব অবৈধ বালিবাহী ষ্টিলবডি ইঞ্জিন নৌকা আটক করে পুলিশ ফাড়িতে নেয়া হয়। তবে অধিকাংশ বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা ও বাল্কহেড যৌথবাহিনীর কড়া নজরদারীর পরও ভোরবেলা অক্ষয়নগর থেকে সুকৌশলে জিনারপুর,সাহেবনগর ও কাইয়ারগাঁও গ্রামের দিকে উজানে চলে যায় এবং প্রশাসনের ধরপাকড় অভিযান থেকে নিজেদেরকে আত্মরক্ষা করে। তারা বলেন, শনিবার রাত ৩টার পরের ঘটনা শুধু আমরা দেখেছি তা নয় বরং নদীর পাড়ে থেকে অনেক সাংবাদিক সরজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার একজন এসআই ৪৭ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে ১৫টি বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা ছেড়ে দেন। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এসআই হামিদ দায়িত্ব পালন কালেও অসংখ্য নৌকা রহস্যজনক ভাবে বের হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিবি পুলিশের অভিযানেও নৌকাযুগে বালি পাথর নৌ পথে বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে। তবে ধোপাজান নদীর পাড়ে প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সদর মডেল থানা পুলিশের টহলের মধ্যেও শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ৩টি বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায় কয়েকজন চোরাকারবারী সিন্ডিকেট চক্র।

শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে নদীতে দায়িত্ব পালন করেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সবুর। তার চোখ ফাকি দিয়ে সদর উপজেলার হুরারকান্দা,কাইয়ারগাঁও,ইব্রাহিমপুর,সৈয়দপুর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক মনিপুরিহাটি গ্রামের কতিপয় চোরাকারবারী প্রায় ৫০/৬০টি বালিবাহী ইঞ্জিননৌকা অক্ষয়নগর গ্রামের পশ্চিমে ধোপাজান নদীতে রাখে। তারা ভোররাত ফজরের নামাজের সময় পূর্ব সদরগড় ও পশ্চিম সদরগড় গ্রামের কতিপয় লোককে নিয়ে বালিবাহী নৌকা রহস্যজনক ভাবে বের করে নেয়। এদিকে ধোপাজান নদীর দুইপাড়ে গোপনীয় মিটিং এর আয়োজন করে সিন্ডিকেট চক্র। কিন্তু চোরাকারবারীদের সকল পরিকল্পনা প্রশাসনকে তাৎক্ষনিকভাবে জানান দেয়া হলে। ফলশ্রুতিতে জেলা প্রশাসক ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীর বালি পাথরসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ রক্ষায় সেনা ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে তাৎক্ষনিকভাবে টহল ব্যবস্থা জোরদার করেন।

অক্ষয়নগর এলাকার ব্যবসায়িরা বলেন, জনগণের একমাত্র ভরসাস্থল হল সেনাবাহিনী। নদীতে সেনাবাহিনীর নজরদারীর পরেও বালু খেকো সিন্ডিকেট কিভাবে গভীর রাতে তীর কেটে বালু-পাথর উত্তোলন করে পুলিশের সামনে দিয়ে বের হয় সেটি আমার বোধগম্য নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে আমাদের জোর দাবি জানাই যেন সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বালু খেকো সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। নয়ত সরকারের কোটি কোটি টাকার খনিজ সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন,সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শনিবার বাদ আছর আগাম মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই ঐ বালিভর্তি স্টিলবডি,ইঞ্জিন নৌকা ও কাটবডির নৌকাগুলো দ্রুতবেগে বালি চুরি করে বেরিয়ে যায়। এসআই রাব্বি বলেন,প্রতিরাতে একজন ইজারাদার ধোপাজান নদীর মুখে জাল ফেলে মাছ ধরতেন। ফলে বালিবাহি ইঞ্জিন নৌকা আটকাতে আমাদের সুবিধা হত। কিন্তু শনিবার দিবাগত রাতে পূর্ব সদরগড় নিবাসী নুরুজ আলী হঠাৎ করে নদীতে জাল ফেলা থেকে বিরত থাকেন। এ সুযোগে চোরাকারবারীরা নদীতে কোন ফাকফোকর বা বাধা না পেয়ে সোজা দ্রুতবেগে বের হয়ে যায়।

বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি কাওসার আহমেদ জানান, গত দুই দিন আগে নদীতে অভিযান পরিচালনা করে ১৬ টি নৌকা জব্দ করে সদর থানা হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। সদর মডেল থানার ওসি নাজমুল হোসাইন বলেন,আমি কিছুদিন হয় যোগদান করেছি। কে কত টাকা নিয়ে কিভাবে নদী হতে নৌকা বের করে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পত্তি লুটতরাজ করে তা বের করার চেষ্টা করবো। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,একজন অজ্ঞাত মুখোশধারী ব্যক্তি পুলিশ প্রশাসনের কোন এক বড় কর্মকর্তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রবল নজরদারীর পরও পর্দার আড়ালে থেকে কাইয়ারগাঁও,হুরারকান্দা,ইব্রাহিমপুর,বালাকান্দা বাজার,সৈয়দপুর,ভাদেরটেক মনিপুরিহাটিসহ ধোপাজান নদীর দুই পাড়ের চিহ্নিত ও অস্থানীয় চোরাকারবারীদেরকে সংগঠিত করে বড় স্টিলবডি ৩০ হাজার টাকা,বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ২০ হাজার টাকা ও পঙ্গপাল কাডবডি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা রেটে ঘুষ ভাগিয়ে নিয়ে ধোপাজান চলতি নদীর বালি লুটতরাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রশাসন এসব গডফাদার ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদী নিয়ে আমরাও খুবই চিন্তিত। নিরবিছিন্ন উপর্যপুরি অভিযান করেও চোরাকারবারিদের থামানো যাচ্ছে না। স্থায়ী কোন ব্যবস্থা না হলে এসব বন্ধ করা যাবে না। গত পরশু দিনের মিটিংয়ে আমি বিজিবি এবং সেনাবাহিনীকে বলেছি খনিজ সম্পদ রক্ষার্থে যা যা করণীয় আপনারা করবেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাল্কহেড নৌকা ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দুই এক দিনের মধ্যে আমরা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ