সৈয়দ মাহমুদুল কবির : ঘটনাটা এরশাদ সরকার আমলের। আমি সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করে আমাদের গ্রামের একটি এতিমখানার সুপার হিসেবে যোগদান করেছি। নতুন প্রতিষ্ঠান। আমাকেই সবকিছু গোছাতে হবে। আন্তর্জাতিক ইসলামি ত্রাণ সংস্থা অর্থায়নে পরিচালিত হতো। ছাত্রদের খাট বানানো আগেই হয়েছিল। লেপ তোষক, খাবারের প্লেট, রান্নার সামগ্রী ইত্যাদি জিনিসগুলো নিয়ে আমি প্রতিষ্ঠানে হাজির হলাম! শুরু হলো আমার নতুন চাকরি। মাস শেষে চেক আনার জন্য ঢাকার অফিসে আসতে হতো প্রতি মাসে! ঢাকা এসে আমার সেক্রেটারি সাহেবের বাসায় অবস্থান করতাম। সেক্রেটারি ছিলেন আমার সম্মানিত চাচা। তিনি বছরের কাছাকাছি হলো ইন্তেকাল করেছেন! আল্লাহ উনাকে তার ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করে উনার কবরকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাগিচা বানিয়ে দিন। আমিন! চাচা আমাকে বললেন, এতিমখানার রেজিস্ট্রশন করতে হবে। সংবিধানও তৈরি করা হয়েছে। তুই সমাজকল্যাণ অফিসে যেয়ে এটা জমা দিয়ে আয়। আমি যথারীতি অফিসে গেলাম। ওখানের এক অফিস সহকারীর সাথে দেখা। অফিস সহকারী আমাকে তার খাস কামরায় ডেকে নিলেন। ভদ্রলোক সকালের নাস্তা খেতে খেতে আমাকে অফিসের নিয়মটা বুঝিয়ে দিলেন। আমাকে বললেন, ৩শ’ টাকা লাগবে। তখন ৩শ’ টাকা অনেক! আমার বেতনই ছিল ৭শ’ টাকা! এটা হাদিয়া! এই হাদিয়া প্রতিটি অফিসার ভাগবাটোয়ারা করে নিবে! সেই সাথে আপনার কাজটাও হয়ে যাবে! আমি তখনো এতোশত নিয়মকানুন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলাম না! যাই হোক, তাকে টাকাটা দেয়ার পর ঘণ্টাখানেকের ভেতর আমার কাজ হয়ে গেল। সংবিধানে এক অফিসার একটি মেজর ভুল আবিষ্কার করলেন! সেজন্য আমাকে আন্ডারটেকেন দিতে হলো, পরবর্তী কারেকশান করে দেওয়ার। চিঠি নিয়ে চলে এলাম। পরবর্তীতে অল্প কিছুদিন পর আমার রেজিস্ট্রশন হয়ে গেল। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল গল্পটা পড়েছিলাম। সেখানে একটা কথা ছিল এমন: তৈল জায়গা মতো এক ফোঁটা ঢালিলে যে কাজ হয়, অজায়গায় কলস কলস ঢালিলে সে কাজ হয় না! তার সুফল হাতেনাতে পেলাম! আজ এতো বছর পর আবার নতুন করে উপলব্ধি করতে হচ্ছে। এখন সরকারি কর্মচারীরা তৈলের মহাসংকট আছে। তৈল ঢালিবারও লোক পাওয়া যাচ্ছে না! তৈল নেওয়ারও লোক পাওয়া যাচ্ছে না! ফলে প্রতিটি কাজেই শ্লথগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে! এতো এতো তাজা রক্তের বিনিময়ে নতুন স্বাধীনতা পেলাম! এখনও কী তৈলের কারিশমা বিলুপ্ত হবে না??
Leave a Reply