আজ ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা দামা চাপার চেষ্টা মামলা করে বাদী বিপাকে

মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের কলাইয়া গ্রামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য মাতব্বররা বাদীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখেছে। বাদীর পরিবারের লোকজন গ্রামের রাস্তা-ঘাটে চলাফেরায় তারা বাধার সৃষ্টি করছে এবং বিভিন্ন আচার- অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ দিতে এড়িয়ে চলছে। প্রায় ৪ মাস ধরে ধর্ষণের এই ঘটনায় নিরীহ এই পরিবার নিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগছেন।

বাদী পরিবারের লোকজন জানান, এই গ্রামের পাশের বাড়ির বাসিন্দা মৃত আব্দুর রউফ এর ছেলে শহিদুল (২০) আত্মীয়তার সূত্রে তাদের ঘরে আসা যাওয়া করতো। ২০২৪ সালের ৫ মে রবিবার রাত ৮ টার সময় পরিবারের অন্য কেউ ঘরে না থাকায় একা পেয়ে শহিদুল জোরপূর্বক ৫ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এই মেয়েকে ধর্ষণ করে এবং ভিডিও রেকর্ড করে। এই ঘটনার পর মেয়েটিকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় প্রতিদিন ধর্ষণ করতো শহিদুল। এমতাস্থায় মেডিকেল রির্পোটে মেয়েটি ১১ সপ্তাহ ১দিনের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন জানতে পেরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি অবগত করেন। পরে ঘটনার মিমাংসা করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে যখন ভিকটিমের পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করেন, তখন স্থানীয় মাতব্বররা ও ছেলের চাচা আব্দুল হান্নান মেয়েটির পরিবারের চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি করে আসছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন এমন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরও জানান,আদালতে মামলা করার পর বিজ্ঞ আদালত ভিকটিমকে পিতার জিম্মায় সমজিয়ে দেওয়ার পর ছেলের চাচা আব্দুল হান্নানের প্ররোচনায়

ভিকটিমের পিতাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমকে তার বসতঘর থেকে নিয়ে এসে ধর্ষকের বসতঘরে ডুকিয়ে দেয়। বর্তমানে ভিকটিম ধর্ষক শহিদুল এর সাথে একই শয়ন কক্ষে থাকছেন।

এই বিষয়ে গ্রাম্য মাতব্বর ও শহিদুল ইসলামের চাচা আব্দুল মন্নান জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর আমরা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাদী-বিবাদী কেউ কথা শুনেননি। বাদী চলে যান মামলায়। মামলা দায়েরের পর আদালত ভিকটিমকে পিতার জিম্মায় সমজিয়ে দেন। কিন্তু ভিকটিমের পিতা ভয়পেয়ে ভিকটিমকে শহিদুল ও তার চাচা আব্দুল হান্নানের বসতঘরে দিয়ে যান। তিনি আরো বলেন,কয়েকদিনের মধ্যেই ভিকটিমের জন্মনিবন্ধন সনদ হয়ে গেলে কাবিন রেজিষ্ট্রি করে ফেলব।

শহিদুল ইসলামের চাচা আব্দুল হান্নান জানান, ঘটনার পর পরেই আমরা গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী ও ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সহ উভয় পক্ষের লোকজন নিয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছে ছিলাম। কিন্তু রাত পোহালেই সিদ্ধান্ত বদলে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের ভাই নাজিম উদ্দীন বাদী হয়ে আদালতে মামলা করায় সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় শালিশী ব্যক্তি কামরুল ইসলাম জানান, একটি নিরীহ পরিবারের মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শহিদুল ইসলাম নামের এক প্রভাবশালী ধর্ষক তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করেছে। বর্তমানে মেয়েটি ১১সপ্তাহ ১ দিনের অন্তঃসত্ত্বা। ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে অনেক বার সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি ছেলে পক্ষের লোকজনের জন্য। পরিশেষে নিরুপায় হয়ে ভিকটিমের ভাই নাজিম উদ্দীন বাদী হয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করার পর আদালত ভিকটিমকে সহজ সরল বৃদ্ধ পিতার জিম্মায় দিয়েছেন। দুই একদিন যেতে না যেতেই ধর্ষক শহিদুল ইসলামের লোকজন মামলার ভয়ে ভিকটিমের পিতাকে হুমকি-দামকি ও ভয়ভীতি দেখানোর পর ভিকটিমের পিতা ভিকটিমকে শহিদুল ইসলামের বসতবাড়ীতে দিয়ে যান। বর্তমানে তারা একই শয়ন কক্ষে বসবাস করছেন।

শালিশী ব্যক্তি সুহেল মিয়া জানান, শহিদুল ইসলাম ভিকটিমকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভালবাসার ছলে মেয়েটিকে অনেকদিন যাবৎ ধর্ষণ করছে। বিষয়টি লোকমুখে জানাজানি হয়ে গেলে ছেলে পক্ষ বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে বিয়ে করেননি। পরে নাজিম উদ্দীন আদালতে মামলা করেছে।

ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, সমাধান করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু করতে পারিনি। পরে ভিকটিমের ভাই আদালতে মামলা করেছে।

মামলার বাদী নাজিম মিয়া জানা ন,আমি বাড়িতে না থাকার সুবাদে লম্পট শহিদুল ইসলাম আমার কিশোরী বোনকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ধর্ষণ করেছে। এ বিষয়ে গ্রামের গন্যমান্য লোকজন সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর আমি আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু শহিদুল ইসলাম মামলার ভয়ে আমার সহজ সরল বৃদ্ধ পিতাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ার পর তিনি আমার বোনকে শহিদুল ইসলামের বাড়িতে দিয়ে আসেন। আমার বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে শহিদুল ইসলাম ও তার চাচা আব্দুল হান্নান এর ফাঁসি চাই।

অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের পরিবারকে উদ্দেশ্য করে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, এই ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে কতিপয় ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে সালিশে বসতো। সবাই অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের পরিবারের পক্ষে কথা বলতো। এই জন্য মেয়েটির পরিবার মামলায় চলে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ