আজ ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ একটি সেতুর জন্য যুগ যুগ অপেক্ষা

প্রধান প্রতিবেদক : কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার উত্তর ফেনুয়া ও উত্তর হাওলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদীর একটি শাখা। শাখানদীটিও স্থানীয় লোকজনের কাছে ডাকাতিয়া খাল হিসেবে পরিচিত। খালটির পূর্ব পাড়ে উত্তর ফেনুয়া আর পশ্চিম পাশে উত্তর হাওলা গ্রাম।  স্বাধীনতার পর থেকেই এই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয় মানুষদের। কিন্তু অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষের সেই অপেক্ষার শেষ হয়নি। ফলে ওই স্থানে বাঁশের সাঁকোতে চলাচলে উপজেলার অন্তত ছয়টি গ্রামের মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৃষ্টির সময় ছাতা ও বই নিয়ে বিপদে থাকি। হাতে ছাতা ধরব, নাকি বই ধরব, নাকি বাঁশের সাঁকো ধরে খালটি পার হব। হাসিবুল ইসলাম, শিক্ষার্থী স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ওই স্থান দিয়ে মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। এখানে পাকা সেতু নির্মিত হলে উত্তর ফেনুয়া ও উত্তর হাওলার গ্রামের পাশাপাশি দক্ষিণ ফেনুয়া, সিকচাইল, বান্দুয়াইনসহ উত্তর হাওলা, খিলা ইউনিয়নের অন্তত ছয়টি গ্রামের মানুষে অনেক বেশি উপকৃত হবেন। পাশাপাশি উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতে অন্তত চার কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। যেই পথ এখন মানুষকে ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে ওই স্থানে সেতু নির্মাণে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছেন, চিঠি দিয়েছেন উত্তর ফেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা মহিবুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকোটি মেরামত করে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে পানি বেশি হলে সেতুটি পানিতে তলিয়ে যায়। এবারের বন্যার সময়ও সাঁকোটি ছিল পানির নিচে। বাঁশের তৈরি এই সাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পারাপার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও সেটি আজও পূরণ হয়নি। জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ‘ওই স্থানসহ মনোহরগঞ্জের যেসব স্থানে ব্রিজ নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ, সেই তালিকা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। ওই ব্রিজের প্রস্তাব বর্তমানে কোন অবস্থানে আছে, সেটি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের জন্য।’ সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁশের সাঁকোটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ ফুট। সাঁকোটি দিয়ে ওই গ্রামগুলোর মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। নড়বড়ে সাঁকোটি পার হতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুদের। স্থানীয় ফেনুয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসা, উত্তর ফেনুয়া হোছাইনিয়া কাওমি মাদ্রাসা, উত্তর ফেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীও ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি চলাচল করছে। এতে অনেক সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। সাঁকোটির কাছাকাছি এলাকাতেই রয়েছে পাকা সড়ক। উত্তর হাওলা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ জানান, নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে গ্রামগুলোর অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নিয়মিত চলাচল করেন। সাঁকোটি ব্যবহার না করলে খালের পূর্ব পাশের অঞ্চলের মানুষকে উপজেলা সদরে পৌঁছাতে হলে ঘুরতে হয় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার। এই সেতু নির্মাণ করা হলে ভোগান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মাদ্রাসাশিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির সময় ছাতা ও বই নিয়ে বিপদে থাকি। হাতে ছাতা ধরব, নাকি বই ধরব; নাকি বাঁশের সাঁকো ধরে খালটি পার হব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ