আজ ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লা সদর উপজেলার রসুলপুর রেলস্টেশন যেন পশুর খামার

মোহাম্মদ সাদাত আলম অন্তর : কুমিল্লায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে মারাত্মক বিপর্যস্ত জনজীবন। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাতেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছে আকস্মিক এ বন্যায়।

দিশেহারা অবস্থায় বাড়িঘর ফেলে প্রাণে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষ। একইসঙ্গে গবাদিপশু গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার খামারিরা। চারদিকে পানির কারণে রাখার জায়গা না থাকায় শত শত গরু নিয়ে খামারিরা আশ্রয় নিয়েছে রসুলপুর রেলস্টেশনে।
এদিকে আকস্মিক বন্যায় চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকটও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে পচে যাচ্ছে গোখাদ্যের প্রধান উপকরণ খড়। উপযুক্ত বাসস্থান ও খাদ্যের অভাবে অনেক গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আদর্শ সদর উপজেলার রসুলপুর রেলস্টেশনে শত শত গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকা থেকে কিছু মানুষও আশ্রয় নিয়েছে এই স্টেশনে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে রসুলপুর রেলস্টেশন যেন গবাদিপশুদের আশ্রয়কেন্দ্র।
কুমিল্লা সদর উপজেলার রসুলপুর এলাকার মো. আরিফ বলেন, আমার খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ১৬০টি গরু রয়েছে। বন্যার পনিতে পুরো এলাকা ডুবে গেছে। আমার খামারের ভেতরে বুকসমান পানি। সে জন্য গরুগুলোকে নিয়ে রেলস্টেশনে আমাকে থাকতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় গরুর বাসস্থান ও খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাজারে এক বস্তা (৫০ কেজি) খড়ের দাম ৫৮০ টাকা। কাঁচা ঘাস তো পাওয়া যায় না। কাঁচা ঘাস না পাওয়ায় অনেক খামারি খাল-বিল, ডোবা-নালা থেকে কচুরিপানা কেটে গবাদিপশুকে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে।
খামারি আবদুর রশীদ বলেন, রসুলপুর স্টেশনের অদূরে পশ্চিম দিকে আমাদের বাড়ি। বুক পরিমাণ পানি বাড়ির উঠানে। বসতঘরের অর্ধেক পানির তলে। গোয়ালঘর ভেঙে গেছে। তাই এখানে পরিবারসহ ১২টা গরু নিয়ে উঠেছি। সরকারিভাবে ডাক্তার আপা এসে গরুর জন্য বিনামূল্যে খড়, ফিট, সাইলেস, শুকনো খাদ্য ও ওষুধ দিয়ে গেছেন। আমার একটা গরু অসুস্থ হয়ে স্টেশনে পড়ে ছিল, খবর পেয়ে ডাক্তার আপা নিজে এসে চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে গরুটিকে সুস্থ করে তোলেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তানজিলা ফেরদৌসী লিমা জানান, বন্যার পনিতে প্রথম দিকে কিছুটা ঝুঁকি ছিল। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটর করেছি। আপাতত গবাদিপশুর তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। বন্যার পনিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গো-চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যা আসার আগে খামারিদের নিয়ে বৈঠক করে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। খামারিদের খড়, ফিট, সাইলেস ও শুকনো খাদ্য সংগ্রহ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকশ খামারিকে গরু, মহিষ ও ছাগলের জন্য বিনামূল্যে খড়, ফিট, সাইলেস, শুকনো খাদ্য ও ওষুধ বিতরণ করেছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ