শওকত মাহমুদ : রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ছাত্র-জনতা অদম্য স্বতঃস্ফূর্ততা ও প্রচণ্ড সাহসে শেখ হাসিনার সরকারকে ফেলেই দিল। শেখ হাসিনার উচ্চ দম্ভ, বে-নজীর কুশাসন ও শেষ মুহূর্তের বীভৎস গণহত্যা এর তাৎক্ষণিক কারণ। আগা-পাশ-তলা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ছাত্রদের সঙ্গে কথাই বলতে চাননি। ইসলাম ধর্মের প্রথম প্রচারক হযরত নূহ (আ:) যখন তাঁর জাতির মানুষদের আল্লাহ’র আনুগত্যের কথা বলতে যেতেন, তখন তারা কানে আঙ্গুল দিত, কাপড় দিয়ে ঢেকে দিত। এমনি না শোনার কারণে আল্লাহ মহাপ্লাবনে ভাসিয়ে দিলেন না-শোনা কাফিরদের।
প্রাসঙ্গিক একটি ঘটনার উল্লেখ পাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মুক্তধারা’নাটকে। দুই গ্রামের দুই মোড়লের প্রতিযোগিতায় শিবতরাই গ্রামের মোড়ল তার গ্রামের মানুষের কান-ঢাকা টুপি পরিয়ে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য, তাদেরকে কিছু জানতে না দেওয়া কিংবা ততটুকুই জানতে দেওয়া যতটুকু স্বৈরাচারের পক্ষে ভালো। নাটকে এর পাল্টা কথাটা ছিল ধনঞ্জয়ের মুখে: ‘জগতটা বাণীময় রে, তার যেদিকটাতে শোনা বন্ধ করবি, সেই দিক থেকে মৃত্যুবান আসবে।’
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যুবাণ ওইদিক থেকেই এসেছিল। কিন্তু এই অবিস্মরণীয় দুনিয়া- দোলানো গণঅভ্যুত্থানের কি এটাই শেষ সীমান্ত? মনে হয় না, হতে পারে না। বহু বহু দিন কালের প্রবহমানতায় সোচ্চার থাকবে এই বিপ্লবের দ্যোতনা।
খুবই গাঢ়ভাবে সঞ্জীবিত করবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর। মানুষের চাওয়াও তাই। গত দেড় যুগে বিদায়ী সরকারের কুৎসিত অগণতান্ত্রিক কাণ্ড-কলাপ, গুম, হত্যা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছে, তারই পথ ধরে সর্বশেষ বিপ্লব।
Leave a Reply