আজ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Oplus_0

জামায়াতে ইসলামের কিছু ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ভুল

মু্হাম্মদ বদরুল আলম শিপু : জামায়াতে ইসলামের কিছু ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বর্তমান প্রজন্মের জন্য সেটি অবশ্যই জানবার দরকার। সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী কর্তৃক ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি এ পর্যন্ত তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৬৪, ১৯৭১ এবং ২০২৪ সালে নিষিদ্ধ হয়। বেশকিছু গৃহীত ভুল সিদ্ধান্ত ইসলামিক এই রাজনৈতিক দলটি গণমানুষের দলে পরিণত হতে দেয়নি। ইতিহাস পর্যালোচনা করে জামায়াতের রাজনীতির বেশকিছু ভুল সিদ্ধান্ত চিহ্নিত করেছি।

১। জামায়াত ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের তৎকালীন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগকে সমর্থন করেনি।

২। ১৯৪৭ সালেরম মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল।

৩। ১৯৬৫-এর নির্বাচনে জামায়াত ইসলাম সর্বপ্রথম নারী নেতৃত্ব ফাতিমা জিন্নাহকে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে জামায়াতের সমর্থনে ভাটা পরে এবং এই প্রথম মওদূদীকে ইসলামী আন্দোলনের নেতার পরিবর্তে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে শুরু করে।

৪। আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তীব্র বিরোধিতা করে জামায়াত।

৫। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আল শামস প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলে। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করে।

৬। স্বৈরাচার এইচ এম এরশাদের নির্বাচনে বৈধতা দেয়ার জন্য ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলো জামায়াতও। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিলো বিএনপি।

৭। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকার কর্তৃক অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির সাথে সংঘবদ্ধভাবে নির্বাচন বর্জন কর জামায়াত। তিনটি দল লাগাতার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আন্দোলন করেছিলো।

৮। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণে ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করেছিলো জামায়াত। শেষমেষ জামায়াতের চাপে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিলো বিএনপি-জামায়াত।

৯। সংকটকালে বাংলাদেশের স্বৈরাচার হিসাবে পরিচিত জাতীয় পার্টি-জাপা ও আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পুর্নবাসনে সহযোগিতা করা।

১০। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা পতনের সাথে সাথে প্রকাশ্য বিএনপির বিরোধীতা করে জামায়াতে আমিরের বক্তব্য প্রধান। বর্তমান সরকারে আমলে গণহারে প্রশাসনিক চেয়ার দখলে নিচ্ছে। তূণমূলে বিএনপির কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি ঢালাওভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

 

জামায়াতে ইসলামীর উপরোক্ত ভুল সিদ্ধান্তগুলো কখনোই দলীয়ভাবে স্বীকার করা হয়নি। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধীতার জন্য নিজেদের অবস্থান জাতির কাছে স্পষ্ট করা হয়নি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার বিপ্লবে জামায়াতের অবদান অস্বীকার করবার সুযোগ নেই। কিন্তু সেই বিপ্লবের ফসল এককভাবে ঘরে তুলবার সে অসুস্থ্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে তাতে জামায়াত আওয়ামী লীগকে পুর্নবাসনের সুযোগ করে দিচ্ছে। বিষয়গুলো জামায়াতের নীতি নির্ধারকদের ভাববার জন্য অনুরোধ করছি।

# মু্হাম্মদ বদরুল আলম শিপু ( সাবেক জি,এস) ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রসংসদ, সদস্য – কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ