আজ ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

টেকনাফে দালালদের সহায়তায় ২০টি পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : কক্সবাজারের টেকনাফের সীমান্তের ২০টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা কৌশলে অনুপ্রবেশ করছে। এ কাজে দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জন প্রতি পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে এপারে আসতে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন দখল নিতে আরাকান আর্মি দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন। সে সঙ্গে এ লড়াইয়ে আরও কিছু বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে। আরাকান আর্মি গত ৬ মাস যুদ্ধে রাখাইনের অধিকাংশ অঞ্চল ও দেশটির সেনা ও বিজিপি’র ক্যাম্প, চৌকি দখলের পরে মংডু শহর দখল নিতে এখন তীব্র হামলা চালাচ্ছেন। অপরদিকে সরকারি বাহিনীও মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পাল্টা হামলা অব্যহত রেখেছে। এ সংঘাতের জেরে মংডু সহ আশপাশের গ্রামে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের প্রাণ হানি ঘটছে। এবং প্রাণ বাচাঁতে নতুন করে আট থেকে বারো হাজার রোহিঙ্গা নৌকা করে নাফনদী পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের সহায়তায় করছে টেকনাফের স্থানীয় কিছু দালাল চক্র। এই দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের  কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

আরও জানা গেছে, এই দালাল চক্র টেকনাফ সীমান্তের ২০টি পয়েন্ট জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে রোহিঙ্গাদের ঢুকে দেওয়ার পরে রোহিঙ্গারা অনেকেই উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে পরিচিত আত্মীয় স্বজন সহ টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ভাড়া বাসায় আশ্রয় গ্রহন করছেন।

মংডু থেকে দালালদের সহায়তায় টেকনাফে আসা রহিম উল্লাহ বলেন, রাখাইনে আরাকান আর্মি ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যেই তীব্র  যুদ্ধ চলছে। কিন্তু তারা রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়। গ্রামের অনেক রোহিঙ্গাকে তারা হত্যা করেছে।মর্টারশেল ও বিমান হামলা চালিয়ে অনেক গ্রাম তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাই রাখাইনে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনায় প্রাঁণ বাঁচাতে নৌকা করে নাফনদী পার হয়ে টেকনাফের বড়ইতলী দিয়ে রাতে আধারে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।এ কাজে স্থানীয় কিছু লোকজন জনপ্রতি পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা করে নিয়েছিল।

মংডু থেকে পালিয়ে আসা আরেকজন সৈয়দ করিম বলেন, মংডু শহরের গ্রামে যখন হামলা করেছে আরাকান আর্মি, তখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে এক সপ্তাহ সীমান্তের কাছে পাহাড়ে অবস্থা করেছি।এবং আরও শত শত মানুষ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে ছিল।পরে ক্যাম্পে পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা স্থানীয় লোকদের সহায়তা নিলে টাকা বিনিময়ে নাফনদী পার হয়ে টেকনাফের হ্নীলা দমদমিয়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছি। এখনো মিয়ানমারের সীমান্তে হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা রয়েছেন।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে রয়েছেন। রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য সহযোগিতা করছেন স্থানীয় কিছু দালাল চক্র।এসব রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের সাধারণ মানুষ  উপর বোঝা হয়ে বসে রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা কাজ করছেন।এবং অনেক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ তারা ঠেকিয়েছেন। তবে টেকনাফ উপজেলায় রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের পরে  যেসব লোক রোহিঙ্গাদের বাসা ভাড়া দিয়েছে  বা দিতেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে এ কর্মকর্তা জানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ