আজ ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তাহিরপুর মোয়াজ্জমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ,তদন্ত শুরু

মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ‘মোয়াজ্জমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন উপজেলা মাধ‍্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

গত ১৪ আগস্ট সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক বরাবরে এই অভিযোগ দাখিল করেছিলেন বিদ‍্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি হিমাংশু রঞ্জন তালুকদার এবং সদস‍্য  মো. আবুল খায়ের। অনুলিপি দিয়েছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা মাধ‍্যমিক শিক্ষা অফিসার, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ‍্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট।

এরই প্রেক্ষিতে সোমবার সকালে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজার সংলগ্ন মোয়াজ্জেমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে যান তিনি। পরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও অভিযোগকারীর উপস্থিতিতে মৌখিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ের অভিযোগের কথা শুনেন।

এ সময় উপস্থিত বিদ‍্যালয় ব‍্যবস্থাপনা কমিটির একাধিক সাবেক সভাপতি ও সদস‍্যরা প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বক্তব‍্য উপস্থাপন করেন।

অভিযোগকারীরা জানান, বিদ‍্যালয়ের শিক্ষার্থীর মাসিক বেতন, ভাতা, বাৎসরিক সেশন ফি, পরীক্ষার ফি, উপবৃত্তির টাকা ও অন্যান্য আয় বাবদ বাৎসরিক প্রায় ৮/১০ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে নিয়মিত জমা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলম কোনো ধরণের হিসাব নিকাশ ব্যতি রেখে বছরের পর বছর এই টাকা আত্মসাত করে চলেছেন। এই বিষয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে মাসিক মিটিংয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকগণ ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের সার্বিক আয় ব্যয়ের হিসাব নিরুপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটির নিকট প্রধান শিক্ষক কোনো ধরনের হিসাব নিকাশ বা আয় ব্যয়ের নথিপত্র উপস্থাপন করতে চাননি। এই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

উপজেলা মাধ‍্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রায় তিন ঘণ্টাব‍্যাপী উপস্থিত অভিযোগকারীদের বক্তব‍্য এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের বক্তব‍্য মনোযোগ সহকারে শুনেন।

 

এ সময় অভিযোগকারীরা প্রধান শিক্ষক দ্বারা এসএসসি শিক্ষার্থীদের নামের অংশে ভুল সংশোধনের কথা বলে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। তারা আরও অভিযোগ করেন যে, তিনি মাসের পর মাস বিদ‍্যালয়ে আসেন না। কিন্তু  রেজিষ্ট্রারে তাকে উপস্থিতি দেখানো হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তকালে বিদ‍্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি হিমাংশু রঞ্জন তালুকদার, সদস‍্য মো. আবুল খায়ের, মো. গোলাম নুর, আনাছ মিয়া, মো. নিজাম উদ্দিন, আবুল খায়ের (২), নজরুল ইসলাম, মো. শামীম মিয়া, আমীর হামজা, জুলফিকার আলী, মামুনুর রশিদ ফকির, মো. মনির হোসেন সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বিকালে তদন্ত কার্যক্রম শেষে উপজেলা মাধ‍্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তিনি যে অভিযোগ পেয়েছেন, এরমধ‍্যে প্রধান শিক্ষক মিছবাহুল আলমের অনুপস্থিতির অভিযোগ অনেকটা সত‍্য বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। বিভিন্ন খাতে অর্থ আত্মসাত বিষয়ে সঠিক তদন্তের স্বার্থে ৪ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা ব‍্যাংক স্ট্রেটম‍্যান্ট, ভাউচার ও অন‍্যান‍্য প্রমাণাদি সংগ্রহ করে তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট করতে সিদ্ধান্ত দেন। এসব কাজ সম্পন্ন করে আগামী ৭ অক্টোবরের মধ‍্যে জানাতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রত‍্যেকে যারা অভিযোগ করেছেন বা অভিযোগকারী হিসাবে যুক্ত আছেন, তারা সকলেই সকলের মতো করে লিখিতভাবে বক্তব‍্য দেওয়ার পরামর্শ দেন। এতে দূর্নীতি বা অনিয়মের সঠিক চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব‍্যক্ত করে তিনি বলেন, এসব কাজ শেষ হলে আরও এক সপ্তাহের মধ‍্যে আমার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ