আজ ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য কার্ড দিয়ে নৌপথে বেপরোয়া চাঁদাবাজি

মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ নৌ পথে সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার বাল্কহেড নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের নামে বেনামে সদস্য কার্ড দিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে জামালগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ ও উপজেলা প্রশাসনের টোল ট্যাক্স ইজারাদার মো ওয়াহেদ আলী আফিন্দি। তিনি সাচনাবাজার ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের রজব আলী আফিন্দির ছেলে।

জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের দুর্লভপুর জামালগঞ্জ সুরমা নদীতে বিআইডব্লিউটিএর ইজারাদার সরকার নিধারিত হারে টোল আদায় করছে এমনটি বলেছেন মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের নৌ-শ্রমিক শরিফুল ইসলাম।

ভীমখালী ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা জামালগঞ্জ-রক্তি-সুরমা স্টীলবডি নৌ পরিবহন মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড (নিবন্ধন নং- ২০২৪-০১.১১.৯০৫০.০০৯৬) এর সাধারণ সম্পাদক আল্লাহ ভরসা পরিবহনের প্রোপাইটর মোহাম্মদ আলী তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি নৌ পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছি। নৌ শ্রমিকদের দাবি দাওয়া আদায়ে যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছি। আমার শ্রমিকরা সর্বদাই নৌ পথে বৈধভাবে রশিদের মাধ্যমে টোল ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। প্রশাসনের নির্দেশে এক সপ্তাহ নদী খোলা থাকলে দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকে। আমার জানা মতে জামালগঞ্জের বিআইডব্লিউটিএ ও টোল ট্যাক্স সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত ইজারাদার ওয়াহেদ আলী আফিন্দি। সরকার নিধারিত হারে আমরা টোল দিয়ে থাকি। ইজারাদারের লোকজন আমাদের কাছ থেকে কোন সময়েই অতিরিক্ত টোল ট্যাক্স আদায় করেননি। নৌপথে নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য কার্ড দিয়ে চাঁদাবাজি করছে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পংকজ তালুকদার গংরা।

তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের পুরান বারুঙ্কা গ্রামের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের সুকানী তানভীর আহমেদ বলেন,সরকার নির্ধারিত চার্ট অনুসারে আমরা বিআইডব্লিউটিএ ও জামালগঞ্জ উপজেলা টোল ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছি। উজানের খাস কালেকশনের ঘাটগুলোতে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। কিন্তু জামালগঞ্জের কোন নৌকা ঘাটে আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল নেয়া হচ্ছে না। শ্রমিক সংগঠনের কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতারা অর্থের বিনিময়ে সদস্য কার্ড বিক্রি করে সুকানীদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলছেন এই কার্ড সাথে থাকলে ইজারাদারকে টোল দিতে হবে না। এতে করে ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

সাচনাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ব্যবসায়ি জয়নাল আবেদীন কাঁচা মিয়া বলেন,জন্মলগ্ন থেকেই আমরা নদী তীরের বাসিন্দারা নৌ পথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। জামালগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ এবং উপজেলা প্রশাসনের টোল ট্যাক্স এর ইজারাদার যে ব্যক্তিই হোক না কেন আমাদের শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। সরকার নিধারিত হারের চেয়ে অনেক কম টোল আমরা দিয়ে থাকি। এই দুটি ঘাটের ইজারাদার ওয়াহেদ আলী আফিন্দি গং। চার আগষ্টের পর থেকে নৌপথে তেমন বেশি নৌকা আসে না। মাসের পর মাস প্রশাসনের নির্দেশে নদী বন্ধ থাকে। আমার জানা মতে এবছর ইজারাদার ওয়াহেদ আলী আফিন্দি প্রায় সাত কোটি টাকা দিয়ে দুটি ঘাট লীজ নিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থির কারণে তিনি অর্ধেক টাকাই নদী থেকে উত্তোলন করতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। যদি ইজারাদার অতিরিক্ত টোল আদায় করে এমন তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জামালগঞ্জের সুরমা নদীর বিআইডব্লিউটিএ ও উপজেলা টোল ট্যাক্স এর ইজারাদার মো ওয়াহেদ আলী আফিন্দি বললেন,বিআইডব্লিউটিএ ঘাট এবং উপজেলা টোল ট্যাক্স ঘাট প্রায় সাত কোটি টাকায় ইজারা নিয়েছি আমরা। অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন,জেলা ট্রলার বাল্কহেড নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর,সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পংকজ তালুকদার, হোসাইন মিয়া গংরা ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সংগঠনের সদস্যদের সদস্য কার্ড দিয়ে নদীতে অবৈধভাবে শ্রমিকদের দিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছে। তাদের দাবি না মানলে আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশেরও হুমকি দেয়।

আমাদের ব্যবসায়িক,সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্মান ক্ষুণ্ন করতে এবং সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্যেশে এমনটি করছেন।

জামালগঞ্জ সুরমা বালু পাথর ব্যবসায়ি সমবায় সমিতি লিমিটেড ০১৫/২৪ সুনাম এর সভাপতি ও সাচনাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া জানান, রবিবার রাতে নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক নেতারা ইজারাদারের লোকজনের সাথে আমার অফিসে বসেছিলেন। তবে শ্রমিক নেতাদের দাবি তাদের প্রায় ৪শত নৌকা দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌপথে চলাচল করে। তাদের নৌকা থেকে সরকার নিধারিত মূল্য থেকে কম অথাৎ ৫০ পয়সা টোল ট্যাক্স আদায়ের জোর দাবি জানিয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার বাল্কহেড নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন,জামাগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ ও উপজেলা টোল ট্যাক্স ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় করায় আমরা জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ করায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সংগঠনকে ডাকানোর পর আমাদের প্রায় ৪শতাদিক নৌকা নদী দিয়ে চলাচল করে জানিয়েছি। আমাদের সংগটনের শ্রমিকদের নৌযান থেকে ৫০ পয়সা করে নেওয়ার জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি চেয়ারম্যান সহ ইজারাদার পক্ষের লোকজনদের।

সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পংকজ তালুকদার বলেন, অনেক শ্রমিকদের সদস্য কার্ডে সংগঠনের সভাপতি সম্পাদকের সীল-স্বাক্ষর নেই সেগুলি কি বৈধ না অবৈধ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে বিষয়ে আমাদের সংগঠনের সভাপতি সম্পাদক জানেন। সদস্য কার্ড নিয়ে কোন নৌ শ্রমিক নদী দিয়ে চলাচল করলে তাদের কাছ থেকে সরকার নিধারিত মূল্যর চেয়ে কম টোল ট্যাক্স আদায়ের জন্য চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেছি।

জামালগঞ্জ উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মোছা মুশফিকুননুর বলেন, নৌযান শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য কার্ড দিয়ে নৌযান চলাচলে ইজারাদারকে হয়রানি সহ রাজস্ব বঞ্চিত করছে। ইজারাদার যদি এ বিষয়ে অভিযোগ করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে বলতে পারব না। গত বৃহস্পতিবার আমি তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুরে ছিলাম। তবে আপনার কাছে কোন তথ্য থাকলে আমার হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ