ইনসাফ ডেস্ক : বহুদিন পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি ২৭৭ জনকে সদস্য পদ দিলো। এতদিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কমিটি কারো সদস্য পদ দেয়নি। এ হিসেবে এই পদক্ষেপ অভিনন্দনযোগ্য। কিন্তু এসব সদস্য পদ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা উপেক্ষা করা যাবে না।
এক. অনেক পেশাদার সিনিয়র সাংবাদিককে সদস্য করা হয়নি।
দুই. সদস্য পদ প্রদানে ক্লাবের গঠনতন্ত্রকে লঙ্ঘন করা হয়েছে।
তিন. ব্যবস্থাপনা কমিটির ভ্রারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান হাফিজ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইয়ুব ভুঁইয়া, কো-আপটেড সদস্য কাদের গনি চৌধুরী ও আবদুল হাই শিকদার- যিনি সাংবাদিকতা করেন না, বর্তমানে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করেন- এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ গোপনে একটি তালিকা তৈরি করে সদস্য পদ নির্বাচন এজেন্ডাবিহীন বৈঠকে আকস্মিকভাবে তা উপস্থাপন করেন। অন্যান্য সদস্যরা এতে আপত্তি করেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তা নাকচ করে দেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাছাই কমিটির সুপারিশকৃত তালিকা ব্যবস্থাপনা কমিটি অনুমোদন করলে তা ক্লাবের নোটিশ বোর্ডে টানানো হবে। ক্লাবের সদস্যরা সেই তালিকা দেখবেন এবং কারো মতামত থাকলে তা সেই তালিকা থেকে ব্যবস্থাপনা কমিটি নতুন সদস্য নির্বাচন করবে। কিন্তু এবার এরকম বাছাইকৃত কোনো তালিকা নোটিশ বোর্ডে টানানোই হয়নি! ইচ্ছেমতো গোপনে তালিকা বানিয়ে গায়ের জোরে সদস্য পদ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কমিটিও সদস্যের যোগ্যতা -অযোগ্যতা বাছাই না করে ভোট ব্যাংক বাড়ানোর জন্য সদস্য পদ দিয়েছে। কিন্তু গঠনতন্ত্রের বিধানগুলো মানার চেষ্টা করেছে। এ কারণে বর্তমান প্রক্রিয়াটি ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বর্তমান দুই সভাপতি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত এবং সংগ্ৰাম পত্রিকার সাংবাদিক। ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটার -অধিকাংশ জামায়াতের সদস্য বা সমর্থক কিন্তু অসাংবাদিক – ঢুকিয়ে তারা নির্বাচনী হয়ে কব্জা করেছে। তাদের সমর্থন দিয়েছে বিএনপি নেতা কাদের গনি চৌধুরী এবং ছদ্মবেশী জামায়াতি সৈয়দ আবদাল আহমদ ও আবদুল হাই শিকদার।
বর্তমানে যে ২৭৭ জনকে সদস্য পদ দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে দেড় শতাধিক জামায়াতের! এদের কয়েক জন প্রকৃত ছাড়া বাকিরা ভুয়া। এমনকি চোর। কদিন আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অবস্থিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে টিভি, কম্পিউটার ও নগদ টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের সংখ্যা অর্ধশতাধিক এবং বাকিরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত।
পরিসংখ্যান সন্দেহাতীতভাবে বলে দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী সাংবাদিক ইউনিয়নের পাশাপাশি এখন জাতীয় প্রেস ক্লাবকেও দখল করে ফেলেছে। এক্ষেত্রে ওই দলটি প্রচুর টাকা খরচ করেছে। এর পাশাপাশি অনেকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা হয়েছে সদস্য পদ দেয়ার নামে।
বাসস থেকে ভবিষ্যতে একজন প্রার্থী হবেন, আর সেখানে কর্মরত জাতীয়তাবাদী ঘরানার সাংবাদিকের সন্তান সিনিয়র সাংবাদিক অজান্তার ভোট পাওয়া নিয়ে ব্যক্তিগত কারণে সন্দিহান থাকায় তাকে সদস্য পদ না দেয়ার হেন চেষ্টা নেই, যা করা হয়নি। এভাবে নানাবিধ আক্রোশ কাজ করেছে সদস্য দেয়ার ক্ষেত্রে!
সবচে আশ্চর্যের কথা, সদস্য পদ দেয়ার আগে প্রথা অনুযায়ী বিএনপি -জামায়াত সাংবাদিক ফোরামের সর্বোচ্চ নেতাদের মতামত নেয়া হতো। এবার তা করা হয়নি! বরং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দোহাই দিয়ে কাদের গনি, সৈয়দ আবদাল ও আবদুল হাই শিকদার তাদের পছন্দের লোক দিয়ে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তুলেছে। এতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এসব নিয়ে উত্তেজনা চলছে। কীভাবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে অন্য সাংবাদিকদের সদস্য পদ দেয়া হলো না? বঞ্চিতরা প্রতিদিন এ নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।
এদিকে ক্লাব সভাপতি হাসান হাফিজ ও সদস্য কাদের গনি চৌধুরীর স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ দোসর বসুন্ধরা গ্ৰুপে যোগদান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। খোদ বিএনপির মধ্যে হচ্ছে, তারেক রহমানের সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলমের সমঝোতা হয়েছে এবং এর দরুন তারা দুজন সেখানে যোগ দিয়েছেন। যদিও তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। এ জন্য তারেক রহমান কাদের গনিকে প্রাথমিকভাবে মিডিয়া সেল থেকে বের করে দিয়েছেন।
প্রেস ক্লাবের এই নতুন সদস্য দেয়া হয় গভীর রাত পর্যন্ত সভা করে এবং পরদিন ওই দু’জন বসুন্ধরা গ্রুপে যোগ দেন। হাসান হাফিজ কালের কণ্ঠে সম্পাদক পদে এবং কাদের গনি বসুন্ধরা গ্রুপের ডিএমডি পদে। এই দুজনের কাছে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের প্রশ্ন, আপনারা ফরিদা ইয়াসমিন, শ্যামল দত্তকে যেখানে ব্যবস্থাপনা কমিটি থেকে সরিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতার লিখিত আবেদনে। মূলত এই দুজন ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের বিরোধী ছিলেন বলে বলা হয়েছে। এই প্রেস ক্লাবে তাদের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। ফরিদা ইয়াসমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক আওয়ামী লীগের আরেক দালাল নঈম নিজামের স্ত্রী। হাসান হাফিজ ও কাদের গনি যদি সত্যিকার অর্থে ছাত্র -জনতার অভ্যুত্থানের প্রকৃত চেতনাধারী হয়ে থাকেন, তাহলে তারা কীভাবে বসুন্ধরার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। খুনী শাহ আলম ও তার ছেলে খুনী তানভীরের পায়ে পড়লেন! গোলামির খাতায় নাম লেখালেন। হাসান হাফিজ কালের কণ্ঠে যোগ দেয়ার আগে বাংলাদেশের অন্যতম বড় চোর ব্যাংক ডাকাত হিসেবে পরিচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সহযোগী এস আলমের পত্রিকায় চাকরি করতেন। এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন? আদতে লুটেরাদের মধু খাওয়ার ক্ষেত্রে হাসান হাফিজের তুলনা নেই।
মূলত বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তারা বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা পদত্যাগ করলেই পারেন। (সংগৃহীত)
Leave a Reply