আজ ৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বালু পাথর খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধে পরিবেশ আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন  

মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন’ সংগঠনের উদ‍্যোগে যাদুকাটা-ধোপাজান নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষণে বেপরোয়া পাথর-বালু খেকো সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার সকালে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ‍্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মলনে সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন সংগঠনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার জানান, সুনামগঞ্জ জেলার যাদুকাটা ও ধোপজান চলতি নদীতে উজান থেকে পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পাথর বালি হাওরাঞ্চলের দারিদ্র বারকি শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে হাতের সাহায্যে বালতি ও বেলচা দিয়ে উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বিগত দিনে বারকি শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধিসহ তাদেরকে ব্যবসায়ী কর্তৃক জুলুম- নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিগত ১৩/১৪ বৎসর যাবত স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় ইজারাদারা মহালগুলোতে ড্রেজার-বোমা মেশিন দিয়ে পাথর-বালি উত্তোলনে গড়ে তুলে পাথর বালিখেকো সিন্ডিকেট।

তিনি জানান, এ কসময় মহালগুলোতে পাথর বালিতে পরিপূর্ণ ছিল, বারকি শ্রমিকরা হাতের সাহায্যে বালতি ও বেলচা দিয়ে যে পরিমাণ পাথর-বালি উত্তোলন করতো প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে পাথর বালি নেমে এসে ক্ষয় পূর্ণ হতো। এতে বারকি শ্রমিকরা যেভাবে কাজের সুযোগ পেতো পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষা হতো। ইজাদার ও ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া মুনাফার লোভে ড্রেজার-বোমা ব্যবহারের ফলে পাথর বালি শূন্য হয়ে পড়ে যাদুকাটা ও ধোপাজান মহালের মূল জায়গা। এতেও পাথর বালিখেকো সিন্ডিকেটের মুনাফার ক্ষুদা মেটেনি, শুরু হয় রাস্তাঘাট ঘরবাড়ি ফসলি জমি এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ ও নদীগর্ভে বিলিন করে চলে বেপরোয়া সিন্ডিকেটের লুণ্ঠন।

এ কে এম আবু নাছার জানান, বেপরোয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বারকি শ্রমিকরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে যেমন প্রতিবাদ করেছে, তেমনি সচেতন সংবাদ কর্মীরাও চালিয়েছে কলম যুদ্ধ, বসে থাকেনি পরিবেশ কর্মীরাও। সকলের আন্দোলনের ফলে মাঝে মধ্যে দায়সারা অভিযান পরিচালনা করে আটক করা হয়েছে। লুণ্ঠনজীবিদের নিয়োগকৃত শ্রমিকদের অধরা থেকে যায় পাথর বালিখেকো সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। লুটপাটের ফলে একদিকে মুষ্টিমেয় কিছু মাফিয়া চক্রের লোকজন শতকোটি টাকার মালিক হয়ে শহরে অট্টালিকা গড়েছে এবং করেছে বিলাস বহুল বাড়ি, সমাজে এদের কারও পরিচয় দানবীর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা।

তিনি আরো জানান, এই সকল অপকর্ম বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০০৯ সালে যাদুকাটা নদীতে ড্রেজার-বোমা বন্ধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে একটি মামলা এবং ধোপাজান নদীতে ৭৪৩১/১৩ এককটি রিট পিটিশন দায়ের করে, বাংলদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির মামলার প্রেক্ষিত মহমান্য আদালত উল্লেখিত দুটি নদীতে ড্রেজার- বোমা মেশিন বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু পাথর- বালিখেকুরা উচ্চ আদালতের নির্দেশ আমান্য করে উল্লিখিত নদী দুটিতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা অসাধু চক্রের সহায়তায় ড্রেজার-বোমার তান্ডব চালালে আমরা পরিবেশ কর্মীরা প্রশাসনের সকল দপ্তরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫/১০/২০১৫ ইং তারিখ পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সরজমিন পরিদর্শন করে ধোপাজান বালি মহাল বিলুপ্তির সুপারিশ করেন। এবং সুনামগঞ্জ জেলা পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আবেদনের সুনামগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম ২০/০৮/২০১৬ ইং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইজারাদার ও পরিবেশ কর্মীদের এক সুনানীর আয়োজন করলে ধোপাজান বালি মিশ্রিত পাথর কোয়ারীতে প্রান প্রকৃতি বিনাশী ড্রেজার-বোমার তান্ডবের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ প্রেরন করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ ইং সালে মহালটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

তিনি এ সময় জনান, ধোপাজান নদীর প্রস্থ ২০১ মিটার আর বর্তমানে ড্রেজার বোমার তান্ডবে অর্ধমাইলের অধিক হবে প্রন্থ, যাদু কাটা নদীর প্রস্ত ৫৭ মিটার কিন্তু ঘাগটিয়া হতে বিন্নাকূলির দিকে তাকালে সাগর সদৃশ কিছু মনে হয়। উভয় নদীর গভীরতা এখন কোথাও ১০০ ফুট কোথাও ১৫০ ফুট। গত ২৯/৮/২৪ ইং এবং ১৯/৯/২৪ ইং তারিখে আমাদের সংগঠনের সভাপতি এবং সিনিয়র সহসভাপতি জেলা প্রশাসকের কক্ষেমতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে ইজারাবিহিন ধোপাজান এবং ইজারাকৃত যাদুকাটা নদীর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি অবৈধ বালিউত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

এ কে এম আবু নাছার জানান, জেলা প্রশাসকসহ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ অবৈধ বালি উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ও কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হলেও বাস্তবে অদ্যাবধি লোক দেখানো ব্যবস্থা গ্রহণ ব্যতিত বালি উত্তোলন বন্ধ করার কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের দৃষ্টিগুচর হচ্ছে না। ইজারাবিহীন ধোপাজান নদী ও সুরমা নদীর সংযোগস্থলে সার্বক্ষণিক জবাবদিহিমূলক প্রহরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় কিন্তু বাস্তবে নামেমাত্র পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশের সম্মুখ দিয়ে শত শত বালিবাহী নৌকা চলে গেলেও পুলিশের কোনৌ ভূমিকা থাকে না।

তিনি আরও জানান, ২৬/৯/২৪ ইং দিবাগত রাতে সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে মৃত চান্দু মিয়ার ছেলে বালিখেকো সিন্ডিকটের সদস্য আব্বাস মিয়ার মৃত্যু হয়েছে, আমাদের প্রশ্ন ইজারাবিহীন নদীতে বালিবাহী নৌকার ধাক্কায় কিভাবে একজনের মৃত্যু হয়? প্রশাসনকে এর দায় নিতে হবে। আশ্চর্যের বিষয় ৫ আগষ্টের দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাথর-বালিখেকো সিন্ডিকেটে দিগুণ ও দানবীয়ভাবে শক্তিশালী হয়ে ড্রেজার-বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন নামের খনন যন্ত্র ব্যবহার করে যেমন তুলছে বালি, তেমনি থেমে নেই নদীর পারকাটা, যেন মহাল দুটি পাথর- বালিখেকোদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। উভয় নদীতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যদের টহলে সম্পৃক্তকরণের এবং একই সাথে শত শত কোটি টাকার সরকারি ও সর্বজনের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের আইনের আওতায় আনয়ন সাপেক্ষ ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি জানান।

আগামী দুইদিন জনসংযোগ চলবে। ১লা অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব‍্যাহত থাকবে বলে জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ‘সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন’র সহ-সভাপতি সাইফুল আলম সদরুল, শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাঈদ, সহ-সম্পাদক আব্দুল গণি পাঠানসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ