আজ ২৮শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় বেশি ক্ষতি কৃষি ও মৎসখাতে

মোহাম্মদ সাদাত আলম অন্তর : কুমিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও মৎসখাতে। কৃষিতে সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য জানিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর। প্রাথমিক সমীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাছ চাষের আড়াই হাজারেরও বেশি পুকুর, দিঘি ও ঘের। তবে বন্যা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও মৎস্য চাষিরা।

বন্যায় পুরো জেলায় ৭০ হাজার হেক্টর কিছু জমি প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রুপা আমন ও সবজির খেত। তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা।

এদিকে মৎস্য খাতে প্রাথমিক সমীক্ষায় ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। তলিয়ে গেছে আড়াই হাজার পুকুর, দিঘি, মাছের ঘের। ক্ষতির পরিমাণ আরও দ্বিগুণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন মাছ চাষিরা।

কুমিল্লার বুড়িচং ভরাসার এলাকার এশিয়ান মৎস্য খামের স্বত্বাধিকারী সালাউদ্দিন জানান, তাঁর মাছের প্রজেক্টে ২ থেকে আড়াই শ মণ মাছ ছিল। বন্যার পানিতে মাছ চলে গেছে, পানি কমলে বোঝা যাবে কি মাছ আছে বা চলে গেছে। তার দাবি প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বুড়িচং প্রয়াতের জলা এলাকার এক কৃষক মোসলেম মিয়া বলেন, আমাদের বীজতলা বীজ সব শেষ হয়ে গেছে। জেলার বড় একটি ধান চাষের এলাকা প্রয়াতের জলা। এ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি কমলে যে নতুন করে চাষ শুরু করব বীজ পাব কোথায়, চারা বীজ সবই তো শেষ হয়ে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল আহমেদ জানান, বন্যা যত দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। প্রাথমিক সমীক্ষায় আড়াই হাজারেরও বেশি পুকুর দিঘি, ঘের তলিয়ে গেছে। দুটি মাছের পোনা উৎপাদন কেন্দ্রও ভেসে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ জানান, বন্যায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। বন্যার ক্ষতির কারণে ধানের বীজ সংকট দেখা দিতে পারে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে কুমিল্লা জেলায় কৃষি ও মৎস্য খাতের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, বন্যায় গবাদিপশু ও হাঁস মুরগির খামার ও এদের খাবার নষ্ট হয়েছে। আমরা ৩০৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। যা আরও বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা দুর্যোগ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী জানান, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠছে। প্রতি উপজেলা ভিত্তিক আলাদা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবিদ্বার, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা। এসব উপজেলার কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ