চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : রাঙ্গুনিয়ায় মোতোয়াল্লী দ্বারা মসজিদ পরিচালনার দাবিতে আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ১১টায় দৈনিক আজাদীর হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
চচট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন ৬নং পোমরা ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী খাঁ মসজিদ ব্যবস্থাপনায় মোতোয়াল্লী পরিবারকে বঞ্চিত, অবজ্ঞা, অবহেলা ও লাঞ্ছিত করে চর দখলের মতো জোরপূর্বক এ মসজিদ দখল করে নেয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর চেয়ারম্যান জহির আহমদ চৌধুরী, তার ছেলে জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী আইয়ুব, আবদুস সাত্তারসহ আরো ৯/১০ জন অসাধু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি।
তাদের অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে মোতোয়াল্লী পরিবারের নিকট মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে এ সংবাদ সম্মেলন করেন আজল উদ্দীন ওয়াকফ এস্টেট মোতোয়াল্লী পরিবার।
প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলন করেছে খাঁ মসজিদের মোতোয়াল্লী পরিবার, মসজিদ কমিটির নেতা ও স্থানীয় মুসল্লীরা।
এ সংবাদ সম্মেলনে মোতোয়াল্লী পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খতিব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মোতোয়াল্লী পরিবারের সদস্য মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান খতিব, হাফেজ আবদুল করিম, মোহাম্মদ আবদুল ছবুর, মোহাম্মদ হারুন, হামিদুর রহমান, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম ও আবদুল মান্নান।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান খতিব বলেন, মরহুম আজল উদ্দিন খতিবের মৃত্যুর পর তার ছেলে আব্দুর শুক্কুর খতিব মোতোয়াল্লী নিযুক্ত হন। তাঁর মৃত্যুর পর স্বীয় ২ পুত্র হাফেজ মাওলানা মমতাজুর রহমান খতিব ও আলহাজ্ব আবদুল ছোবহান খতিব আইনগতভাবে যুগ্ম মোতোয়াল্লী নিযুক্ত হয়ে মসজিদ পরিচালনা করে আসছিলেন।
এ দুই মোতোয়াল্লী দায়িত্বে থাকাকালীন পাকা মসজিদ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করলে প্রতিপক্ষগণ ক্ষমতার অপব্যবহার ও লোভের বশবর্তী হয়ে মোতোয়াল্লীদ্বয়কে মসজিদ নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান শুরু করে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞ ওয়াকফ প্রশাসককে অবহিত করলে বিগত ২৯ মার্চ ১৯৮৬ সালে ৪৮৬ নং মেমো মূলে প্রতিপক্ষ মসজিদ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়ার লিখিত আদেশ প্রদান করে। এ নির্দেশের প্রেক্ষিতে ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালত চট্টগ্রামে ঘোষণা ও নিষেধাজ্ঞা মোকদ্দমা দায়ের করলে আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন।
নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে বিগত ৩১ জানুয়ারি ১৯৯৩ ইং ইসি নং ১৩৮৪ মূলে আজল উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেটে দুই জন মোতোয়াল্লী নিযুক্ত থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
এ নির্দেশের বিরুদ্ধে যুগ্ম মোতোয়াল্লীগণ জেলা জজ আদালতে মিস আপিল ৫৫/৯৩ইং মূলে শুনানি শেষে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের ১নং কোর্ট বিগত ১৯ জুন ২০০৪ সালে উক্ত আদেশ বেআইনি ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষগণের আপিল নং ৮/০৪ মূলে খারিজ করে দেয়।
পরবর্তীতে কমিটি পক্ষে আবারো আপিল করলে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আপিল নং ০৭/২০০৭ মূলে বিবাদিদের বিরুদ্ধে বিগত ৭ জুলাই ২০১৩ খারিজ করে দেন।
উল্লেখ থাকে যে, আদালত কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ঘোষিত রায়সমূহ মোতোয়াল্লী পরিবারের পক্ষে গেলেও প্রতিপক্ষ গণ পেশিশক্তি ব্যবহার করে জোরপূর্বক উক্ত ওয়াকফ এস্টেটের কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা প্রদান করে আসছে।
মোতোয়াল্লী পরিবারের সদস্যরা ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনা ও মসজিদে নামায আদায় করতে এসে অবৈধ দখলদারদের কাছে লাঞ্ছিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ অবৈধ দখলদাররা মসজিদ উন্নয়নের নামে হাট বাজারে দোকানে দোকানে দান বাক্স বসিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে আত্মসাৎ করে আসছে।
গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬ টায় মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খতিব সহ মোতোয়াল্লী পরিবারের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে ওয়াকফ এস্টেট পরিচলনায় আদালত কর্তৃক বিভিন্ন মোকদ্দমার রায় তাদের পক্ষে আসার কথা প্রতিপক্ষের লোকজনদের অবহিত করে মসজিদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে বললে তারা তােেদর প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে।
তারা উদ্যত হয়ে মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খতিবের মরহুম পিতা হাফেজ মাওলানা মমতাজুর রহমান খতিবের কবরের সমাধিফলকে মোতোয়াল্লী ও নামটি কালো রঙ দিয়ে মুছে দেয়।
মোতোয়াল্লী পরিবারের সদস্যদের জীবন ও জানমালের নিরাপত্তা এবং ওয়াকফ এস্টেট পরিচালনায় আদালতের রায় ও বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের হাত থেকে ঐতিহাসিক খাঁ মসজিদকে রক্ষার জোর দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এ বিষয়টি নিয়ে জনমনে যাতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় সে লক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন ৬নং পোমরা ইউনিয়নের খাঁ মসজিদের ব্যবস্থাপনায় মোতোয়াল্লী পরিবার ও স্থানীয় মুসল্লীরা।
Leave a Reply