আজ ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শাল্লায় পিআইসি বন্টনে অনিয়মের অভিযোগ

(সুনামগঞ্জ) বিশেষ প্রতিনিধি, তৌফিকুর রহমান : সুনামগগঞ্জে কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ। ৫৩টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় ৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধে মাটির কাজ করা হবে। কাজের শুরুতেই নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে স্থানীয় হাওরে জমি নেই এমন লোকদের নিয়ে পিআইসি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

কৃষকদের অভিযোগ, পাউবোর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের পাশের জমি আছে এমন কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠন করে কাজ করার কথা। প্রতিটি কমিটিতে একজন সভাপতি, একজন সদস্য সচিব ও তিনজন সদস্য থাকবেন। কিন্তু কৃষকদের বাদ দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে প্রভাবশালীদের দিয়ে। এমনকি হাওরে যাদের কোনো জমি নেই, তাদেরকেও পিআইসিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া একই পরিবারে একাধিক পিআইসি দেওয়া হয়েছে। শাল্লা উপজেলায় এভাবে অন্তত ১৫টি পিআইসি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম রোধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। এসব পিআইসির বরাদ্দ অন্তত ২ থেকে ৩ কোটি টাকা।

জানা যায়, শাল্লার ৮৪ কিলোমিটার বাঁধের জন্য ২৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নে ১১৫টি পিআইসির জন্য ৬৪৩টি আবেদন জমা পড়ে। পিআইসি গঠন প্রক্রিয়ায় নানা অভিযোগ ও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল হওয়ায় ১৪ ডিসেম্বর সব পিআইসি স্থগিত করেন জেলা প্রশাসক। এরপর ১৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক নিজে শাল্লায় যান এবং সভা করেন। ওই সভার পর ৬০টি পিআইসি গঠন করা হয় এবং উপজেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পিআইসি গঠন জানাজানি হওয়ার পরই নানা অভিযোগ ওঠে।

উপজেলার হবিবপুর গ্রামের বাসিন্দা সরূপ চন্দ্র দাশ ২৩ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, একই ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ফখরুল ইসলাম ২৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন, উদগল হাওরের ১০৯, ১১০ ও ১১১ নং পিআইসি দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। বাঁধের কাছে তাদের জমি নেই।

 

১নং আটগাঁও ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বিএনপি নেতা মতিউর রহমান ইউএনও’কে দেয়া অভিযোগে বলেন, কালিয়াকুটা হাওরের ৮৮ নং পিআইসির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন ও ৮৯ নং পিআইসির সভাপতি গোলাম মোস্তফা আপন ভাই। পিআইসি নিতে মাহতাব উদ্দিন বাবার নাম পরিবর্তন করে লিখেছেন। ছায়ার হাওরে ১৮ নং পিআইসি নিয়ে অভিযোগ করেছেন মনুয়া গ্রামের মাসুম মিয়া। এ ছাড়া মঙ্গলবার কালিয়াকোটা হাওরের ৯০ ও ৯১ নং পিআইসি গঠনে অনিয়মের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন রাহুতলা গ্রামের লোকজন।

কাবিটা স্কিম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন মনিটরিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা জামায়তের আমির মো. নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, সব পিআইসি স্থগিত করার পর ডিসি শাল্লায় এসে মিটিং করেছেন। এরপর প্রশাসনের লোকজন ৬০টি পিআইসি অনুমোদন দিলেও আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এখন পিআইসি নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। আমরা এসব বিষয়ে জানতে চাইব।

কমিটির আরেক সদস্য উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুব সোবহানী চৌধুরী বলেন, কমিটির সদস্যের না জানিয়ে ৬০টি পিআইসি দেয়া হয়েছে। আমরা শুনতেছি উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজশে পিআইসি দেওয়া হয়েছে।এমন মন্তব্য অনেকেই করছে। পিআইসি অনুমোদনের বিষয়ে আমরা দলীয়ভাবে বসবো বলে জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাল্লা উপজেলার শাখা কর্মকর্তা (এসও) উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ রিপন আলী বলেন, ১৭ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের উপস্থিতিতে সভা হয়। সেই সভায় সবকিছু আলোচনা হয়। সবার মতামতের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ৬০টি পিআইসি গঠন করা হয়। কাউকে খুশি করার জন্য কোনো পিআইসি করা হয়নি। অভিযোগ উঠলে যাচাই-বাছাই করে নীতিমালা মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতানের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ