মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ধর্ষণ মামলা তুলে না নেয়ায় সমাজচ্যুত করা হয়েছে ধর্ষিত পরিবারকে। বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় গ্রামের মহাপ্রভূর আখড়ায় এক সভায় সমাজচ্যুতির সিদ্ধান্ত গ্রাম্য মাতব্বরেরা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন গ্রামের বাসিন্দা সুনীল দাস। আলোচনায় অংশ নেন গ্রাম্য সমাজের ৫৫ জন।
গত ১৮ অক্টোবর বিরাশিগাঁইয়া সালিশে ইউনিয়নের বিশিষ্টজনের মতামতের ভিত্তিতে সমাজচ্যুতি না করে মিলেমিশে সমাজে চলার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু
বুধবার রাতে আব্দুল্লাহপুর গ্রামের ৫৫ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে সভায় নতুনভাবে সিদ্ধান্ত হয়। সভায় গ্রহণ করা হয় ধর্ষিত পরিবারকে সমাজচ্যুত ঘোষনা করা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুল্লাহপুর গ্রামের মৃত সুনাতন দাশের ছেলে সুনিল দাশ। সভায় আলোচনায় অংশ নেন একই গ্রামের সুবাস দাশ পিতা মৃত সুরিন্ড দাশ, বিধান দাশ পিতা মৃত বিদু ভূষণ দাশ, লক্ষণ দাশ পিতা মৃত খোকা দাশ, অখিল দাশ পিতা মৃত অশ্বিণী দাশ, দীনেশ ঘোষ পিতা মৃত টেনু ঘোষ, শুভ ঘোষ পিতা দীগকান্ত ঘোষ, বেনু ঘোষ পিতা দীগেন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দাশ পিতা মৃত সুধীর দাশ,
কৃষ্ণ দাশ পিতা মৃত হরকুমার দাশ, বলাই দাশ পিতা কিরঙ্গ দাশ, রাশিন্ড দাশ পিতা মৃত রাজিন্দ্র দাশ, টিপু মজুমদার পিতা কৃপেশ মজুমদার, মালিন্ড দাশ পিতা মৃত কোমোদ দাশ, অজিত দাশ ও অজই দাশ পিতা মৃত গোপিকা দাশ, বিনয় ভূষণ দাশ, কিরঙ্গ দাশ প্রমূখ।
সভায় আলোচনা হয় যে, এই পরিবারের লোকজনকে ধর্মীয় কোনো আচার অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ দেওয়া যাবে না। ভালমন্দে তাদেরকে দেখাশোনা করা যাবে না। উঠবস করা যাবে না। রাস্তাঘাটে চলাফেরায় প্রকাশ্য বাধা না দিয়ে এড়িয়ে চলা ইত্যাদি আলোচনা হয়।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আব্দুল্লাহপুর গ্রামে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ দুপুরে জোরপূর্বক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। যখন স্থানীয়ভাবে ঘটনার সমাধান না হওয়ায় ৩০ আগস্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের হয়। যার নং-৪২৬/২০২২ইং। মামলাটি এখনও চলমান আছে।
আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কটন দাশের ছেলে প্রজেশ দাশ ২০২২ সালের ৩০ মার্চ দুপুরে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। এরপর ধর্ষকের আত্মীয় স্বজনেরা গ্রামে প্রভাব খাটিয়ে ধর্ষিত পরিবারকে নানাভাবে মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করে। এতে নির্যাতিত পরিবার অনড় থাকেন। এই কারণে গত বুধবার এই পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। অপরদিকে, ধর্ষককে আড়ালে রেখেছেন ওই গ্রাম্য প্রভাবশালীরা। তাকে আইনী শাস্তি থেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
সুবাস দাশ বলেন, বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় গ্রামের মহাপ্রভূর আখড়ায় সভার মাধ্যমে বিরাশীগাঁওয়ের পঞ্চায়েতের দেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে। ওইদিনের সভায় ৫৫জন গন্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। আমি বলেছি কাউকে সমাজচ্যুত করা যাবে না। তবে মেয়ে শুদ্ধ হয়ে সমাজে উঠতে হবে।
বিধান দাশ বলেন, আমরা মনিন্দ্র দাশের পরিবারকে কোনো সমাজচ্যুতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করিনি। মহাপ্রভূর আখড়ায় আমরা কীর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি।
লক্ষণ দাশ বলেন, বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টায় গ্রামের মহাপ্রভূর আখড়ায় সভার মাধ্যমে বিরাশীগাঁওয়ের পঞ্চায়েতের দেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক থাকবে আমি মতামত দিয়ে চলে আসি।
সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক বলেন, এমন ঘটনার খবর আমার জানা নেই। এ ঘটনায় কোনো অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।
Leave a Reply