আজ ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড খুলনায়,ক্ষমতার হাত বদদ : চাঁদাবাজি বহাল

মোঃ ইমরান হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের তৃত্বীয় বৃহত্তম খুলনা শহররে অভ্যন্তরে সোনাডাঙ্গায় রয়েছে বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে প্রতিদিন ১৮ টি রুটে ৪৫০ থেকে ৫০০টি বাস যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন ওই বাস স্ট্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের দখলে থাকলেও এবার তা পাল্টা দখল নিয়েছেন বিএনপি পন্থিরা। তবে ক্ষমতার হাত বদল হলেও আগের মত চাঁদাবাজি বহাল রয়েছে।

বাস মালিকদের সাথে কথা বলে জেনে গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস কোচ মালিক সমিতি নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়। তৎকালিন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ওই কমিটির সভাপতি হন। এছাড়া খুলনা মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আনিসুর রহমান পপলু এই সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। তারা দায়িত্ব নিয়ে দৈনিক বাস প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করার নির্দেশনা দেন। ২০১৮ পর্যন্ত তাদের কমিটির নিয়ন্ত্রণে ছিল ওই বাস স্ট্যান্ডটি।

নানান রকমের বিতর্কে পড়ার পর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আগে আওয়ামী লীগে কোন ঠাসা হয়ে পড়েন মিজানুর রহমান মিজান। ফলে ধীরে ধীরে শহর থেকে তার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কমতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেলের নির্দেশে ওই কমিটির নেতাদের বাস স্ট্যান্ডে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডের একক নিয়ন্ত্রণ নেন শেখ সোহেল। তার হয়ে স্ট্যান্ডটি পলিচালনা শুরু করেন খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন সোনা।

তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডটি দখল করে নিয়েছেন বিএনপি পন্থীরা। বর্তমানে সেখানে খুলনা বিভাগীয় বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি নতুন একটি সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই সমিতির সভাপতি হয়েছেন মোকাম্মেল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন রবিউল করিম। তারা সরাসরি বিএনপি বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো পদে না থাকলেও বিএনপি সমর্থিত হিসেবে পরিচিত।

আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, তারা অস্ত্রশস্ত্র ও দলবল নিয়ে এসে আমাকে জোর করে সেখান থেকে বের করে দিয়েছে। একদন সন্ত্রাসী কাযদায় দখল করেছে।

 

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রবিউল করিম বলেন, ১৫ বছর আগে প্রকৃত মালিকদের বের করে দিয়ে রাজনৈতিক ভাবে স্ট্যান্ড পরিচালনা করা হয়েছে। তারা বাসপ্রতি ৫০০ টাকা আশেপাশে চাঁদাআদায় করতো। তবে আমরা বাস প্রতি একশ বা দেশড় টাকা করে নিচ্ছি। কারণ স্ট্যান্ড পরিচালনায় অনেক খরচ আছে।

শনিবার দুপুরে ওই বাস স্ট্যান্ডটি পরিদর্শন করেছেন এই প্রতিবেদক। একাধিক বাস চালকরা জানিয়েছেন, সেখানে ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজি কোন কিছুই বন্ধ হয়নি।

খুলনা-সাতক্ষীরা রূটের বাস চালক ইব্রাহিম বলেন, ‘এবারে ভেবেছিলাম দেশটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে বাস্তবে তো কিছুই হল না। আগে একপক্ষ চাঁদা আদায় করতো, এখন আরেক পক্ষ আদায় করছে। পুলিশ ও প্রশাসনের লোকেরা সবাই সব কিছুই জানে, তারাও এই চাঁদার টাকার ভাগ পাই, তাহলে এসব অনিয়ম বন্ধ করবে কে?’

চালক সহকারি রশীদ বলেন, একটি বাস দৈনিক যা লাভ করে তার এক তৃত্বীয়াংশ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আরেক অংশ টাকা শ্রমিকের বেতন ও বাকি টাকা মালিকরা পান। এই চাঁদার বাড়তি টাকা ঠিকই যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়ার মাধ্যমে নেওয়া হয়। সুবিধাবাদি শ্রেনীর নিয়ন্ত্রণ বন্ধ না করতে পারলে বাস ভাড়ও কমানো সম্ভব হত।

আরেক বাস চালক নিয়ামুল বলেন, দেশে এখন অন্তর্বতিকালিন সরকার থাকলে বিএনপির নেতারা তলে তলে সবকিছুরই নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন। ঠিক আওয়ামী লীগের মত সাধারণ মানুষকে তারা নির্যাতন শুরু করেছেন। এই বাসস্ট্যান্ডও তার ব্যতিক্রম কিছুই নয়।

দখলের চেষ্টা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন শুধু মালিক সমিতি নয়। মোটর শ্রমিকেদের একটি সংগঠন রয়েছে ওই স্ট্যান্ডে। গত ৫ থেকে ৭ আগস্ট দফায় দফায় সেটি দখলের নেয়া চেষ্টা করছিল একটি পক্ষ। ততে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা সেটি বন্ধ করতে পেরেছেন।

মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, এক পক্ষ এসে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের রুমে তালা মেরে দিয়েছিল। পরে ছাত্ররা তা জনতে পেরে এখানে এসে তালা খুলে অফিস আমাদের নিয়ন্ত্রনে দিয়ে গেছে। তবে এখনো শঙ্কা রয়েছে প্রতিপক্ষের হামলা চালানোর।

তিনি বলেন, সমিতিটি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছিল। ছাত্রদের তা বোঝাতে পেরেছি বলেন তারা আমাদের সহায়তা করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ