মো আব্দুল শহীদ সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ১ম স্ত্রী আহত মাছুমা আক্তারের পারিবারিক আদালতে মামলা করায় এবং দ্বিতীয় বিয়ের সম্মতি না দেয়ায় স্বামী জিয়াউর রহমানের ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে অপরাধিদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার দুপুরে উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রাজাই গ্রামে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯ নভেম্বর সোমবার দিবাগত রাত অনুমান ২টায় উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রাজাই গ্রামে মাছুমা আক্তারের পিত্রালয়ে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ধারালো অস্ত্রের উপর্যুপরি আঘাতে মাছুমা আক্তার ও পিতা মাইজ উদ্দিন (৭০) গুরুতর আহত হন। ঘটনার সময় তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা দৌঁড়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে রাতেই তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে রেফার করেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন আবুবকর সিদ্দিক, মোফাজ্জল হোসেন, নুরুল ইসলাম, আকবর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন, হযরত আলী, সুরুজ মিয়া, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল কাদির, রমজান আলী, এরশাদ মিয়া, আবুল কাশেম, শেফালী বেগম, শাহানা বেগম, আমেনা বেগম, ফরিদা বেগম, আয়েশা বেগম, ইমিনা বেগম, আছমা বেগম, আরপিনা আক্তার, খাদিজা বেগম,
আহত মাছুমা আক্তার, পিতা ও সাবেক ইউপি সদস্য মাইজ উদ্দিন, ভাই সাইফুল ইসলাম প্রমূখ।
মানববন্ধনে আহত মাছুমা আক্তার (৩১) জানান, তিনি জিসকা ফার্মাসিটিক্যালস এর রিপ্রেজেনটেটিভ হিসাবে চাকুরি করতেন। এ সময় বাংলাদেশ বর্ডারগার্ড (বিজিবি) ক্যাম্পের অফিস সহকারী জিয়াউর রহমানের সাথে রিলেশন হয়। সে একই উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের বাগবাড়ি গ্রামের মরহুম মকরম আলীর ছেলে। পরে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর স্বামী জিয়াউর রহমান তাকে নিয়ে শ্বশুড় বাড়িতে বেড়াতে আসতো। এলাকার জামাই হিসাবে স্থানীয় মানুষের সাথে পরিচিত হয়। এই সময় কৌশলে মেডিসিন খাইয়ে দুই মাসের গর্ভপাত নষ্ট করেছে। হঠাৎ পরিবারের সম্মতি নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়। এ সময় তাকে সম্মতি না দেয়ায় দিনের পর দিন নির্যাতন চালিয়ে যায়। স্বামী জিয়াউর রহমানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর পিত্রালয়ে চলে আসে মাছুমা আক্তার। তখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মাছুমা আক্তার আরও জানান, মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ৮ নভেম্বর শুক্রবার রাত ২ টায় আমার স্বামী মুখে কালো মুখোশ পরে কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে দরজার ফাক দিয়ে অস্ত্র দ্বারা সীটকারী খুলে বসতঘরে ডুকার সময় আমি টের পেয়ে চোর চোর করে চিৎকার করলে পালিয়ে যায়। পরে গত ১০ নভেম্বর রবিবার রাত অনুমান আড়াই টায় অস্ত্র দিয়ে দরজার ফাক দিয়ে সীটকারী খোলার সময় আমি টের পেয়ে চিৎকার করলে আবারও পালিয়ে যায়। পরে ১৮ নভেম্বর সোমবার রাত অনুমান ২ টায় আমার বাবা রুমের দরজা খুলে বাহির হয়ে প্রস্রাব করতে গেলে বাহিরের লাইট বন্ধ করে ঘরের ভেতরে ঢুকে কাঠের নিচে বসে থাকে সন্ত্রাসীরা। তারপর হঠাৎ সবাই ঘরে ঢুকে মাছুমা আক্তারকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করতে থাকে। এই ঘটনায় ২০ নভেম্বর তাহিরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তাহিরপুর থানার তদন্তকারী অফিসার মো আমির হোসেন জানান, মাছুমা আক্তারের পিত্রালয়ে গভীর রাতে কৌশলে দরজা খুলে বসতঘরের ভেতরে ঢুকে মাছুমা আক্তারকে এলোপাতারি কুপিয়েছে দুষ্কৃতিকারীরা। হামলার মূল রহস্য তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
তাহিরপুর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায় আহত মাছুমা আক্তার ২০ (নভেম্বর) বিকাল ৪ টার সময় ৪ জনকে সাক্ষী করে অজ্ঞাতনামা একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্য বস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply