মাসুম বিল্লাহ ইমরান, বিশেষ প্রতিনিধি : ”দাওয়াত এবং প্রশিক্ষণে মজবুত হবে সংগঠন, জ্ঞানের আলোয় গড়বো সমাজ, সফল হবে আন্দোলন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে খুলনায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহাসিক সাথী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকাল সাড়ে ৮ টায় খুলনা প্রেসক্লাব ব্যাংকুয়েট মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির খুলনা অঞ্চলের আয়োজনে ঐতিহাসিক সাথী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক, আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে ও খুলনা মহানগরীর সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের পরিচালনায়, সাথী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি মুঞ্জুরুল ইসলাম। প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরীর আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খুলনা মহানগরীর আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা নিয়মিত কার্যক্রম করতে পারছি এটা আল্লাহর রহমত। দেশ এবং জাতিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন তা অবিস্মরণীয়। স্বৈরাচার হাসিনা বলেছিল আদালতের বিষয় মাঠে আন্দোলন করে লাভ নেই।
ছাত্রদের দাবিকে ছোট করে দেখা হয়েছিল। এত এত বৈষম্য যা ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি ছিল। কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার তা ভিন্ন খাতে নিয়েছিল। ছাত্রদের দাবি মেনে নিলে সরকারকে পালানোর প্রয়োজন হতো না। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভুলের কারণেই, বৈষ্ণম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি, এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা জানেন বিপ্লবের একটি প্রতি বিপ্লব থাকে। আপনারা দেখেছেন আওয়ামীলীগ সরকার অনেকবার অনেকভাবে ফিরে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার জন্য। শেষ পর্যন্ত আনসার হয়েও ছাত্রলীগ ফিরে এসেছিল কিন্তু ছাত্র-জনতা তাদের সঠিক ওষুধ প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের চূড়ান্ত বিজয় সেদিন, যেদিন কালেমার পতাকা পথ পথ করে আকাশে উড়বে। সকল সেক্টরে যেতে আমাদের জ্ঞানে, মানে, যোগ্যতায় সবদিক থেকে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। আমি বলতে চাই ইসলামের জন্য খুলনা অঞ্চল সব সময় উর্বর। দেশের মানুষ খুলনা সাতক্ষীরা অঞ্চলের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইসলামের জন্য আমরা আমাদের জীবন দিতেই প্রস্তুত আছি।’
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের সাথী ভাইদের সর্বক্ষেত্রে দেশ গড়ায় অবদান রাখতে হবে। ছাত্র-জনতা যেভাবে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে ঠিক সেভাবে জুলুমতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে দেশের প্রতিটি সেক্টরে ইনসাফ কায়েম করার জন্য নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে ছাত্রশিবিরের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে নৈতিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। ক্যাস্পাস গুলোতে তরুণ ছাত্রসমাজকে মাদক-সন্ত্রাস থেকে দূরে রেখে ইসলামের সু-মহান আদর্শের পরিচয় তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেকটি জনশক্তিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। ছাত্রশিবিরের জনশক্তিরা নিজেদের গড়ে তুলবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের ভালোবাসতে হবে এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে। ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকে সকল জুলুম-বাধা আদর্শিক শক্তি দিয়ে প্রতিহত করেছে। তাই দেশের যেকোন সংকট ও ক্রান্তিকালে ছাত্রশিবির সর্বশক্তি দিয়ে সব ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙা জবাব দিবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জালিমের শক্তিকে ধ্বংস হয়েছে। আমরা জুলুম নির্যাতন থেকে মুক্ত কিন্তু ষড়যন্ত্র লেগেই আছে। স্বৈরাচারী সরকার প্রশাসনকে তার রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করেছে। পুলিশ বাহিনীকে দলীয়করণ করে রাজনীতি করেছে। কিন্তু এই চিত্র আজ আর নাই। এই সরকার শত-শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা বিচার ব্যবস্থা ও প্রশাসন সব জায়গা ধ্বংস করে ফেলেছে। আওয়ামী সরকারের আমলে পাঠ্যক্রমে ছিল অশ্লীলতা আর অশ্লীলতা। এমন শিক্ষা ব্যবস্থা এ জাতি কখনো চাইনি। শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিকতার কোন বালাই ছিল না। প্রতিটি মসজিদ মক্তবে পরিণত করতে হবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কে একটি লাইব্রেরিতে পরিণত করতে হবে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যেখানে খেলার মাঠেও থাকবে বই।’
মুঞ্জুরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আমরা কতশত পথ মাড়িয়েছি জানিনা। কিন্তু সামনে আরো যতদূর হোক যেতে হবে। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে যায় না। যাদের শাহাদাতের বাসনা থাকে, তারা পালায় না। শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি যিনি ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছেন। সেরা সাহসী বীর হিসেবে আমরা স্মরণীয় হয়ে থাকবো। এই জাতি কি চাই। এই জেনারেশনকে স্টাডি করে, সেই অনুযায়ী ইসলামের সু-মহান দাওয়াত তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কোয়ালিটি সম্পূর্ণ কাজ-কর্মসূচি করতে হবে। সাংগঠনিক সকল কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে হবে, আমরাই সেরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে ছাত্রশিবির তাদের পাশে থাকবে। এই জাতিকে নেতৃত্ব দিতে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। সাথীরা হবে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, আনুগত্য ও সততা সম্পপন্ন। যত বাধা আসুক আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট। যাদের সাথে আল্লাহ আছে, কোন অপশক্তি তাদের পরাজিত করতে পারে না।’
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক গালিব আব্দুল্লাহ, খুলনা মহানগর সেক্রেটারি এস এম নূরুল্লাহ, সাতক্ষীরা শহর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি ইমামুল হোসেন, খুলনা জেলা উত্তর সভাপতি হাফেজ বেলাল হোসাইন রিয়াদ, জেলা দক্ষিণ সভাপতি আবু জার গিফারী, বাগেরহাট জেলা সভাপতি নাজমুল হাসান সাইফ।
উল্লেখ্য, খুলনা মহানগরী, খুলনা জেলা, সাতক্ষীরা জেলা ও বাগেরহাট জেলার প্রায় দুই-সহস্রাধিক সাথী ঐতিহাসিক এই সাথী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply