আজ ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Oplus_131072

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঠিকাদার আব্দুল মান্নানের অনুদানে অনেকেই সাবলম্বী  

মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের, বাঙ্গাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান । তিনি পেশায় একজন সফল ঠিকাদার তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, আব্দুল মান্নান কনস্ট্রাকশন । ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একজন সমাজ সেবক এবং তার অনুদানে এখন অনেক অসহায় মানুষ সাবলম্বী হয়েছে।

 

আব্দুল মান্নানের অনুদানের মধ্যে অন্যতম হলো সেলাই মেশিন বিতরণ। তিনি বাঙ্গাবাড়ী ইউনিয়ন, আলীনগর ইউনিয়ন, রাধানগর ইউনিয়নসহ গোমস্তাপুর উপজেলা, নাচোল উপজেল ও ভোলাহাট উপজেলার গত ৮ বছরে প্রায় ১৫00 টি সেলাই মেশিন বিতরণ করেন এবং তার বিতরণ করা সেলাই মেশিন পেয়ে সাবলম্বী হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

গত তিন বছর আগেও নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা ছিল জেসমিনের। সহায়-সম্বল বলতে কিছুই ছিল না। ছিল না মাথা গোঁজার ঠাঁই। রেলের জমিতে বসবাস করতে হয়। জেসমিনের স্বামী দিনমজুর হওয়ায় তিন বেলা ঠিক মত খেতে পারতেন না। জেসমিন বেগম বলেন, এই অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে চলতো আমাদের সংসার । একদিন আব্দুল মান্নান একথা জানতে পেরে আমাকে ডেকে পাঠালেন । তার সাথে দেখা করার পর তিনি আমাকে একটি সেলাই মেশিন ও কিছু নগদ টাকা দেন । এখন আমার স্বামীর সাথে সাথে আমিও রোজগার করি, আমাদের সংসার খুব ভালো চলছে, আমি দোয়া করি আল্লাহতালা উনাকে আরো ধনসম্পদ দান করুন।

বাঙ্গাবাড়ী গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি খুবই গরীব মানুষ আমার তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছিলাম। দুই বছর আগে আব্দুল মান্নান আমার মেয়েদের বিয়ে দেয়ার জন্য নগদ টাকা ও একটি করে সেলাই মেশিন উপহার দেন। সেলাই মেশিন পেয়ে আমার মেয়েরা ও এখন উপার্জন করে এবং আমি আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে ঘর ভালো করেছি। মান্নান ঠিকাদার অনেক ভালো মানুষ।

দাড়ীপাতা গ্রামের আব্দুল মান্নানের সেলাই মেশিন পেয়ে শত শত নারী আজ উপার্জন করে সাবলম্বী হয়েছেন। তারা সকলেই বিভিন্ন রকমের নকশিকাঁথা, প্যান্ট জামা ও বাচ্চাদের বিভিন্ন পোশাক তৈরি করে, নিজেরাই নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। তারা সকলেই আব্দুল মান্নান ঠিকাদারদের দীর্ঘায়ু কামনা করছেন।

গোমাস্তাপুর উপজেলা বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে আব্দুল মান্নান ঠিকাদার তার নিজ গ্রামের মসজিদ, বাঙ্গাবাড়ি জামে মসজিদ, ভবানীপুর জামে মসজিদ, জোড়গাছিয়া জামে মসজিদ সহ প্রায় ২০ টি মসজিদে দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা করে তার সামর্থ্য অনুযায়ী তিনি দান করেছেন। ভবানীপুর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন মোঃ রেজাউল করিম ও মসজিদ কমিটির সদস্য আব্দুল মালেক বলেন ১৯৯০ ইং সালে আমরা মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করি অর্থ অভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে পারছিলাম না, একদিন আব্দুল মান্নান আমাদের মসজিদে নামাজ আদায় করেন, নামাজ শেষে তিনি আমাদের মসজিদের জন্য টাইলস, প্লাস্টার ও রং এর কাজ করার জন্য অঙ্গীকার করেন এবং তিনি তার অঙ্গীকার মত আমাদের মসজিদের কাজ সম্পন্ন করেন। বিনিময়ে কোন প্রকার কিছু চেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে, তারা বলেন আব্দুল মান্নান অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ তার চাওয়া পাওয়া বলতে কিছুই নেই, তিনি শুধু আমাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

রাধানগর ইউনিয়নের জাতাহারা জামে মসজিদের সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি মসজিদে নামাজ আদায় করতাম, আব্দুল মান্নানের বাবা মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন, এবং তিনি আমাদের মসজিদ নির্মাণের জন্য ৩,৫০,০০০/- টাকা অনুদান প্রদান করেন, তার অনুদানের টাকায় আমরা এই মসজিদ নির্মাণ করি।

আব্দুল মান্নানের সাইডে কর্মরত অবস্থায় গত (৫ অক্টোবর ২০২৪ ইং) নঁওগা জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মানপুর কানাকড়ি গ্রামের, অধীর সরদার নামের এক ব্যাক্তি মারা যান। ২৩শে আক্টোরব বুধবার তার পরিবারের খোঁজ খবর নিতে সেখানে যান আব্দুল মান্নান এ সময় মৃত অধীর সরদারের স্ত্রী সাগরী বালার হাতে নগদ ১,০০,০০০ লক্ষ টাকা তুলে দেন তিনি এ সময় তিনি আরও বলেন আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমাদের খোঁজ খবর রাখবো এবং আমার সাধ্যমত তোমাদের সাহায্য করবো।

ঠিকাদার আব্দুল মান্নান আরো বলেন ১৯৯৫ সালে আমি একটি, ডিপটিবওয়েল এর অপারেটর ছিলাম, সে সময় আমি ঠিকাদার মোঃ বাইরুল ইসলাম এর সাথে পরিচয় হবার পর তাদের বিভিন্ন কাজ দেখা শুনা করতাম, এর মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজে প্রতি আমার ভালবাসা ও আগ্রহ তৈরি হয়। সে সুবাদে কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য ঠিকাদারি দপ্তরে যাওয়া আসার মাধ্যমে চেনা জানা হয়। পরে আমি নিজেই নিজ উদ্দোগে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করি এবং আমার ঠিকাদারি জীবন শুরু হয় তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মানের মাধ্যমে এবং আমি যে ডিপটিবওয়েল অপারেটর ছিলাম সেটার সাব-কন্ট্রাক্টার হিসেবে কাজ শুরু করলাম এবং সেখান থেকে কঠোর পরিশ্রম করে আজ আমি ঠিকাদার আব্দুল মান্নান একজন সফল ব্যবসায়ী। আমার ঠিকাদারি ব্যবসা সহ রয়েছে দুইটি ইটভাটা, ১টি রাইস মিল। আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ইট ভাটা ওরাইস মিলে, হাজার হাজার অসহায় লোক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। আমি সরকারি কাজ দক্ষতার সহিত নির্মান করতে সক্ষম হয় এবং সততার সহিত বিগত ২৯ টি বছর সুনামের সহিত ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই শুধু একটি মাত্র চাওয়া হল আমি দারিদ্র মানুষের পাশে থাকতে চাই। যতদিন জীবনে আমি বাঁচবো ততদিন আমি মানুষের কল্যানের জন্য আমার সাধ্যমত আমি তাদের পাশে সব সময় থাকব। আমার জন্য শুধুমাত্র দোয়া করবেন, আমি যেন সততার সহিত চলতে পারি। আমার পরিবার এর জন্য সকলে আপনারা দোয়া করবেন এবং আমার দোয়া সকলের জন্য সব সময় রইল। তিনি রাজনীতি আসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কোন রাজনীতিতে জড়াতে চাই না এখন আমি ব্যবসা করে অনেক ভালো আছি আমি বাকি জীবনটা এভাবেই কাটাতে চাই।

আব্দুল মান্নানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আমার ছেলে এখন অনেক বড় ব্যবসায়ী। আমি দোয়া করি সে যেন আরো বড় হয়। তার অনুদানের কথা যখন আমি মানুষের মুখে মুখে শুনি তখন আমার অন্তরটা জুড়িয়ে যায় এমন ছেলেকে আমি জন্ম দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ