ইনসাফ ডেস্ক : আজ রবিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ও সুপারিশ বঞ্চিত ১৬,২১৩ জন প্রার্থীদের বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে নিয়োগের দাবি মেনে নেয়ায় NTRCA এর চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং দ্রুত নিয়োগের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীগণ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বঞ্চিতদের অন্যতম প্রতিনিধি খোরশেদ আলম।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, আমরা ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ও সুপারিশ বঞ্চিত ১৬,২১৩ জন প্রার্থী দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগের দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে এসেছি। আমাদের ন্যায্য দাবিগুলো তুলে ধরে এনটিআরসিএ সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে একাধিকবার আবেদন করেছি। আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা স্যার, শিক্ষা সচিব ম্যাম, এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান স্যারের সাথে একাধিকবার মিটিং করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা সর্বোচ্চ ইতিবাচক বার্তা পেলেও এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ থেকে আমরা প্রথম দিকে ইতিবাচক বার্তা না পাওয়ায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলাম। সর্বশেষ গত ১২/১০/২০২৫ তারিখ আমরা শাহবাগে জাদুঘরের সামনে জনদুর্ভোগ না করে মহাসমাবেশ এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করি। সেখান থেকে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ স্যার এর মাধ্যমে সচিবালয়ে পুনরায় শিক্ষা সচিব ম্যামের সাথে দেখা করে কথা বলি। আমাদের নিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করি। কিন্তু আমরা ইতিবাচক সমাধান না পাওয়ায় ১৩/১০/২০২৫ তারিখে শাহবাগ থেকে ‘মার্চ টু এনটিআরসিএ’ ঘোষণা করি।এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সাথে প্রথমে আমাদের ৫ সদস্যের টিম মিটিং করেন। আমরা কোন ইতিবাচক সমাধান না পাওয়ায় এনটিআরসিএ সামনে আমাদের আন্দোলনরত প্রার্থীরা বিক্ষোভ করে এনটিআরসিএ এর ভিতরে প্রবেশ করে।পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিশেষে রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ স্যার এনটিআরসিএ তে আসেন। আমরা ডিসি মাসুদ স্যারকে আমাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করি।
তারা আরো বলেন, অবশেষে ডিসি মাসুদ স্যারের মাধ্যমে আমাদের ৬ সদস্যের প্রতিনিধি টিম আবার এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান স্যারের সাথে মিটিং করেন।সেখানে এনটিআরসিএ এর মাননীয় চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম স্যার, যুগ্ম সচিব জনাব এরাদুল হক স্যার, ডিসি মাসুদ স্যার,পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আহসানুজ্জামান স্যার সহ এনটিআরসিএ এর একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ফলস্বরূপ, এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ ডিসি মাসুদ স্যারের মধ্যস্ততায় আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। দাবি মেনে নেয়ায় আমরা এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান জনাব আমিনুল ইসলাম স্যারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তারা এ সময় তাদের দুটি দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবি দুটো হল, ১। ২০২৫ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্যপদ যুক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সুপারিশ বঞ্চিত ১৬,২১৩ জনকে নিয়োগ দিতে হবে।
২। নীতিমালা পরিবর্তনের পূর্বে সুপারিশ বঞ্চিত প্রার্থীদের নিয়োগের লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বাধা তুলে দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী শূন্য পদ যুক্ত করে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ সবাইকে নিয়োগ দিতে হবে।
মিটিং শেষে ডিসি মাসুদ স্যার ব্রিফিং করে আমাদের দাবি সমূহ মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা ডিসি মাসুদ স্যারের নির্দেশে এনটিআরসিএ থেকে চলে আসি।
আমরা চাই এনটিআরসিএ কতৃপক্ষ অতি দ্রুত শূন্য পদ সংগ্রহ করে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য পদ যুক্ত করে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ সুপারিশ বঞ্চিত ১৬,২১৩জন প্রার্থীর নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন।
বেসরকারি স্কুল ও কলেজের লক্ষাধিক পদে শিক্ষকের সংকট পূরণের লক্ষ্যে বিগত ০২/১১/২০২৩ তারিখে NTRCA বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে ১৮,৬৫,৭১৯ জন আবেদনকারী থেকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৪,৭৯,৯১১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়, সেখান থেকে লিখিত পরীক্ষায় ৮৩,৮৬৫ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয় এবং সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখে ৬০,৫২১ জন প্রার্থী চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়।গত ১৯/০৮/২০২৫ তারিখে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি রেজাল্ট প্রকাশিত হয় এবং ১,০০,৮২২টি পদের বিপরীতে মাত্র ৪১,৬২৭ জন প্রার্থী সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। বিপুল সংখ্যক শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৬,২১৩ জন প্রার্থী নিয়োগ বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ, আমরা রাষ্ট্র কর্তৃক যাচাইকৃত যোগ্য শিক্ষক। সর্বোচ্চ মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় এই বিশাল সংখ্যক প্রার্থী এখন প্রচণ্ড হতাশা, মানসিক চাপ সহ পারিবারিক ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার।
তারা এ সময় আরো বলেন, দেশে হাজারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন তীব্র শিক্ষক সংকট চলছে। একটি হিসাব অনুযায়ী ১ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এমতাবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। বর্তমানে এসএসসি এবং এইচএসসি রেজাল্ট খারাপ হওয়ার পেছনে যোগ্য শিক্ষক ঘাটতি প্রমাণ করে।শিক্ষক সমাজ জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতা। এটি জাতির শিক্ষার মানোন্নয়নের সাথেও জড়িত।
আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে শিক্ষা এবং শিক্ষক নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সকল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়োগ প্রদান করুন।