মো আব্দুল শহীদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাধীন ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদীতে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু-পাথর লুটপাট অব্যাহত রয়েছে।
এখন নদী পথে এসব যানবাহন চলাচল না করলেও ভিন্ন পথ অবলম্বন করে আইনের পরোয়া না করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন সিন্ডিকেটের ৫ জন ব্যবসায়ী। তারা হলেন, জাকারিয়া, কবির আহমদ, জাহিদ হোসেন, সন্তোষ দাস, জাকির হোসেন। তাদের দায়িত্ব হলো মইনপুর গ্রামে আসা বালু-পাথর বেচাকেনা এবং ক্র্যাশার মেশিনে পাথর ভেঙে বিক্রি করা। এই ব্যবসার আড়ালে রয়েছেন আরও ব্যক্তি। তাদের দায়িত্ব হলো দিনে ও রাতে সুযোগ পেলেই ড্রেজার চালানোর নির্দেশ দেয়া। চলতি নদীর পাড়ে উত্তোলিত স্তুপকৃত পাথর পিকআপ,ট্রাক ও ট্রলিতে করে শহীদ মিনারের পাশের সড়ক দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের উপর দিয়ে চৌমুহনী হয়ে সুরমা ইউনিয়নের কৃষ্ণনগরের সড়ক পথ ব্যবহার করে বেরীগাঁও হয়ে হালুয়ারঘাট পর্যন্ত নিরাপদে পৌঁছে দেয়া। পরে যানবাহনের চালকগণ মইনপুর গ্রামে নিজ দায়িত্বে পাথর নিয়ে পৌঁছে। সড়ক পথের বিভিন্ন স্থানে এই সিন্ডিকেটের অর্ধশত লোক অবস্থান করে নিরাপদে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে রয়েছেন সিন্ডিকেটের একাধিক ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার অংশে নদী পথে ও সড়ক পথে এতোদিন ব্যবসায়ীরা দিনে ও রাতে সময় সুযোগে ড্রেজার মেশিন চালিয়ে পাথর উত্তোলন করে বাল্কহেড ও পঙ্গুপাল নামক যানবাহন ভর্তি করে অবাধে বেচাকেনা চলতো। এখন দিনের বেলায় বন্ধ থাকলেও রাতের বেলায় ড্রেজার দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে নদীতে। রাতের বেলায় নদী পথে পাথরবাহী যানবাহন আসা-যাওয়া করছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সুরমা নদীরপাড়ের সরকারী জায়গা ভাড়া স্থানীয়রা জানান, মইনপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা তাদের দখলীয় নদীরপাড় এলাকার জায়গা পাথর ব্যবসায়ীদের নিকট বাৎসরিক হিসাবে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন। কিন্তু এই ব্যবসার জায়গা দেয়ার কারণে এলাকার হাজারো পরিবার নোংরা পরিবেশে আক্রান্ত হচ্ছেন। যারা পাথর ব্যবসার জন্য জায়গা ভাড়া দিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা হলেন, আনোয়ার হোসেন, পিতা মৃত হারিছ আলী, নায়েব আলী, পিতা মৃত আব্দুল গণি, কুদরত আলী, পিতা মৃত আলম উল্লাহ।
যানবাহন চলাচলে নানা সমস্যা এসব যানবাহন চলাচলে রাস্তা-ঘাটের বিনাশ ঘটছে। প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারো মানুষ। সড়কে বেপরোয়া চলাচলের কারণে নানা দূর্ঘটনা ঘটে চলেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবি এবং সাধারণ মানুষজন।
ক্র্যাশার মেশিন ও যানবাহনের শব্দে মানুষ অতীষ্ঠ ক্র্যাশার মেশিনের শব্দে মইনপুরবাসী এবং যানবাহনের বিকট শব্দে পুরো অঞ্চলবাসী অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সুরমা ও জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের রোগী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ, শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং রাতের ঘুম হারাম হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা অতীষ্ঠ চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ী, মীরেরচর পয়েটের ব্যবসায়ী, মঙ্গলকাটা বাজারের ব্যবসায়ী এবং হালুয়ারঘাট বাজারের ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া যানবাহন চলাচলে অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তারা ব্যবসার কাজে মারাত্মক বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন।
সুরমা ইউপি সদস্য আব্দুল হাই বলেন, ক্র্যাশার মেশিন ও ট্রলির শব্দে আমাদের এলাকার মানুষ সড়কে চলাচলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রোগী ও শিশুরা মারাত্মক অশান্তিতে ভোগছেন। প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করবো।
ইউপি সদস্য ফিরোজ মিয়া বলেন, চলাচল সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এখনই জরুরি।
সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা বলেন, আমাদের সুরমা ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট ভাঙছে বেপরোয়া ট্রলি ও পিকআপে। দূর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ হচ্ছে না। কয়েক জন ব্যবসায়ীর কারণে কোটি কোটি টাকার রাস্তা-ঘাটের বেহাল অবস্থা হচ্ছে।
সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো নাজমুল হক জানান,হালুয়ারঘাট মইনপুরে সুরমা নদীর তীরে ধোপাজান চলতি নদীর অবৈধ পাথর ডাম্পিং করা হয়। তা আমার জানা নেই। তবে আপনার কাছ থেকে এইমাত্র জানলাম। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি আমিনুল হক জানান, মইনপুর সুরমা নদীর তীরে ধোপাজান চলতি নদীর পাথর ডাম্পিং করা হচ্ছে এইমাত্র জানলাম। তবে খোঁজ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply