আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

Oplus_0

আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স

ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন

৫৫ বছর বয়সী রহমান (কাল্পনিক নাম) সাহেব গ্রামে থাকেন। ছেলে মেয়েদের দেয়া খরচের টাকায় সংসার চলে।

মাঝে মধ্যে জ্বর কাশি হয়। গ্রামের দোকান থেকে এক দুই ডোজ ওষধ কিনে খান। সুস্থও হয়ে যান। গত কিছুদিন জ্বরে ভুগছেন, দোকান থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন। এবার আর সুস্থ হচ্ছেন না। ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখলেন প্রস্রাবে এক ধরনের জীবাণু যা অধিকাংশ আ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী। ডাক্তার তাকে ইনজেকশন ওষুধ দিলেন যার খরচ প্রায় প্রতিদিন চার হাজার টাকা। তা আবার কমপক্ষে দশ দিন নিতে হবে যা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এ রকম হাজার হাজার রহমান সাহেব আছেন আমাদের দেশে। রহমান সাহেবের প্রস্রাবে পাওয়া আ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু সৃষ্টি হওয়ার ঘটনাই হল আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স।

 

আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স কি কারণে হয়?

১। আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অসচেতনতা

২। অত্যধিক ও অপ্রয়োজনীয় আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার

৩। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার

৪। পূর্ণ কোর্স আ্যান্টিবায়োটিক সম্পন্ন না করা

৫। সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা

৬। প্রকৃতি পরিবেশে বিস্তার – পোল্ট্রি, ফিশারীতে আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।

 

আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স প্রতিরোধ না করলে ভয়াবহতা কি?

১। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর সাত লক্ষ মানুষ মারা যায়

২। আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি বছর এক কোটি মানুষের মৃত্যু হবে

৩। ডব্লিউএইচও ধারণা করছে আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের কারনে ২০৫০ সালে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে ১.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের প্রতিরোধের উপায় কি?

১। শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে

২। সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

৩। শক্তিশালী জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে

৪। নজরদারি বাড়াতে হবে

৫। সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে পলিসি, প্রোগ্রাম ও বাস্তবায়ন শক্তিশালী করতে হবে

৬। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট প্রচারণা ও পরামর্শ নিশ্চিত করতে হবে

৭। চিকিৎসকের ঔষধ লেখার ক্ষেত্রে অনৈতিক চাপ বা প্রভাব বন্ধ করতে হবে

৮। পোল্ট্রি, ফিশারীতে আ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

৯। মডেল ফার্মেসির নীতিমালার বাহিরে আ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না।

বাংলাদেশ সরকার ওষধ বিক্রির নীতিমালায় মডেল ফার্মেসি ও মডেল ফার্মেসি শপের প্রবর্তন, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া সম্পূর্নভবে আ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ এবং ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট ছাড়া আ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। সরকারের গৃহীত নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হাজার-লক্ষ রহমান সাহেবরা আ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাবে এ প্রত্যাশা রইল।

 

ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক (ফার্মাকোলজি), নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ