মো: মফিদুল ইুসলাম সরকার, রংপুর প্রতিনিধি : রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে দেয়া সম্মাননা গ্রহণ করেননি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম। আজ শনিবার এ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বিরোধী কলাম লেখক দু’শিক্ষককে সম্মাননা দেয়ার জেরে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের পর তিনি এ সম্মাননা গ্রহণ না করার ঘোষণা দেন। জানা যায়, প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর উপদেষ্টা মো: নাহিদ ইসলাম উন্মুক্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দিতে গেলে মঞ্চের সামনে থাকা পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম এবং গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম নামের দু’শিক্ষার্থী তাকে এ প্রশ্ন করেন।
রাইসুল ইসলাম নাহিদ ইসলামের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার বক্তব্যের পেক্ষাপটে বলতে চাই যারা এখনো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগর রাজনীতি এবং দোসরি করছে তারা এখনো বলবৎ আছে। আমাদের এ মঞ্চে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর কমলেশ চন্দ্র দাস আছেন। ইনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। এ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মশিউর রহমান। যিনি ছাত্রদের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আজ মঞ্চে এবং তাকে সম্মাননা স্মারক দেয়া হলো। মঞ্চে কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান উপস্থিত আছেন। তিনি বিগত ১৩ আগস্ট দৈনিক কালের কণ্ঠে একটি কলাম লেখেন। যেখানে তিনি লিখেছিলেন আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরেও পরিস্থিতি সামলানোর পর্যায়ে ছিল। ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে চাই আবু সাঈদের প্রাণের বিনিময়ে আর কি সামলানোর মতো ছিল, সেটা আমরা জানতে চাই। আমরা ব্যাখ্যা চাই। ওনাকেও স্মারক সম্মাননা দেয়া হলো। তাহলে তখন আমরা আন্দোলন করে যদি আমরা আজ এই দিনটা দেখতে পাই। যারা স্বৈরাচারের দোসরি করেছেন। তাদেরকে সম্মামনা স্মারক দেয়া হচ্ছে। মঞ্চে বসানো হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’প্রশ্নের উত্তর দিতে আবারো মাইকে আসেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারে থেকেও বিভিন্ন জায়গায় বলেছি। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাও এ কথাটি বলছেন, আমাদের অভ্যুত্থান শেষ হয়ে যায়নি। এ অভ্যুত্থানকে আরো বিপ্লবে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে আরো একটি গণঅভ্যুত্থানও করতে হতে পারে। কারণ আমরা মনে করছি ফ্যাসিস্ট কাঠামো এখনো রয়েছে। আমাদের এক দফা দাবি ছিল সেই ফ্যাসিবাদি শাসন ব্যবস্থার বিলোপ ঘটনো। সেটি যেমন রাষ্ট্রে, সমাজে একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়েও। ’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এ (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়) বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি এসেছেন। তার কাছে আমার আবেদন থাকবে যাতে এসব বিষয়কে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখেন। আপনারা যে অভিযোগ করলেন বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু এ মঞ্চ থেকে যারা ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগ এবং স্বৈরাচারের দোসর তাদেরকে স্মারক সম্মাননা দেয়া হয়েছে। ফলে একই মঞ্চ থেকে আমাকে যে সম্মাননাটি দেয়া হয়েছে এটি আমি গ্রহণ করছি না। হয়তো কোনো একদিন ফ্যাসিবাদমুক্ত এ বেরোবিতে (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়) আসব। আপনাদের সকল দাবি দাওয়া পূরণ করার সক্ষমতা নিয়ে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়াবো। সেদিনই আমি এ সম্মাননাটি গ্রহণ করব।’এ সময় করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান শিক্ষার্থীরা।
পরে মঞ্চে থাকা অভিযুক্ত কলা অনুষদের ডিন ড. শফিকুর রহমান নিজেই মাইকের সামনে আসেন। তিনি বলেন, তার কলাম আন্দোলনের বিপক্ষে ছিল না। যেহেতু শিক্ষার্থীরা আমার কলামকে ভালোভাবে নেননি সে কারণে আমি আজকের সম্মাননা স্মারক প্রত্যাহার করে নিলাম। এরপর তিনি মঞ্চে বসে থাকা অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি ড. কমলেশ চন্দ্র দাসের পাশে গিয়ে বসেন। নাহিদ ইসলাম মঞ্চ ছাড়ার পর তারা মঞ্চ ছাড়েন।
এ ঘটনায় উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকের বলতে শোনা যায় ডিন হয়ে পদাধিকার বলে অনুষ্ঠানে আসলেও তাদের নিজেদের মঞ্চে না উঠা উচিৎ ছিল।
Leave a Reply