মোঃ ইয়াছিন মিয়া, কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পরিবেশ দূষন করে তিন ফসলী জমি, স্কুল, মাদ্রাসা ও বসতবাড়ী পাশে লাইসেন্সবিহীন ও নিষিদ্ধ এলাকায় ইঁট প্রস্তত ও বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কারণে “মা ব্রিকস” এন্টারপ্রাইজ নামক অবৈধ ইঁটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় এবং চালু রাখার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন কুমিল্লা জেলা ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসন।
গুঁড়িয়ে দেয়া অবৈধ ইঁটভাটাটি কোন অনুমোদন না নিয়ে ১১ মাস পরে পুনরায় চালু করে আবার ইঁট প্রস্তত ও নতুন বয়লার নির্মাণ করায় ক্ষোভ জানিয়ে এলাকাবাসী।
এলাবাসীর পক্ষ থেকে অবৈধ ইঁটভাটাটি পুনরায় চালু করে এলাকাবাসীর ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে আইননুসারে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশীনগর ইউনিয়নের বসন্তপুর নামক গ্রামে “মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ” প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী খোরশেদ আলম। ইঁট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন” (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) এর ধারা ৪ ও ৮ অমান্য করে দীর্ঘদিন পরিবেশ দূষন করে লাইসেন্সবিহীন ও নিষিদ্ধ এলাকায় ইঁট প্রস্তত ও বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।
আইনের ৮ ধারা পড়ে জানা যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আবাসিক এলাকা, ফসলি জমি, ফলজ ও বনজ বাগান থেকে ১০০০ মিটার বা ১ কিলোমিটার মধ্যে ইঁটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বাস্তবে দেখা যায় নিদিষ্ট দুরত্বের মধ্যে উপজেলার মনিকান্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার, সরকারী স্বাস্থ্য ক্লিনিক, ইঁটভাটার খুব কাছাকাছি বসবাসরত ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ রয়েছে। যা ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিস তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা প্রাপ্ত হয়ে “মা ব্রিকস” ইঁটভাটা নামীয় ছাড়পত্র বাতিলের জন্য বিভাগীয় অফিসে সুপারিশ প্রেরণ করে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও আইনের তোয়াক্কা না করে ইঁটভাটাটি বেআইনীভাবে পরিচালনা করায় গত ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সরওয়ার লিমা, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা ও পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন সহ অন্যান্য কর্মকর্তা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীদের সহযোগীতায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে এলাকার হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে ইঁটভাটা টি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
এবং তাত্ক্ষণিক ইঁটভাটার মালিককে নগদ ১,০০০০০ (একলক্ষ) টাকা জরিমানা করা হয়। ইঁটভাটার মালিক আইন আদালত তোয়াক্কা না করে গুঁড়িয়ে দেয়া ইঁটভাটা পুনরায় একই স্থানে চালু করে এবং অনুমতি না নিয়ে নতুন বয়লার নির্মাণ সহ ইঁট তৈরীর কাজ করছেন।
উপজেলা বসন্তপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হানু মিয়া জানান তিন ফসলী জমি, স্কুল, বাজার ও মাদরাসা মধ্যে অবৈধভাবে ইটভাটা প্রশাসন ভেঙে দেওয়ার পর কিভাবে আবার চালু করে আমরা জানিনা। এ ইঁটভাটা যাতে বন্ধ করা হয় আবারও প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই।
এলাকাবাসীরা জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন সরজমিনে এসে তদন্ত করেছে। “মা ব্রিকস” নামক এই ইঁটভাটাটি কারণে স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন অসুস্থ থাকে, কাছাকাছি অনেক জমিতে ফসল হয়না, আশেপাশের বাড়ির লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে প্রশাসন এ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছে বলেছে এ জায়গায় ইঁটভাটা করা যাবে না। অবৈধ এ ইঁটভাটা চালু হলে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকাবাসী।
পরিবেশ দূষণের প্রভাবে জলবায়ু পরিবর্তন সহ পানি ও মাটি দূষণ ঘটায়, যা পরিবেশ এবং জলজ প্রাণীর ক্ষতি করে। এছাড়া, ইঁটভাটার ধোঁয়া ও তাপ কৃষি উৎপাদনকে ব্যাহত করে, ফসলের ক্ষতি করে এবং জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে “মা ব্রিকসে”র স্বত্ত্বাধিকারী খোরশেদ আলম বলেল, আমি হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে ইঁটভাটা চালু করেছি। তবে আদেশ কাউকে দেখানো যাবে না।
কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব জানান চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের “মা ব্রিকসে”র ইটভাটাটি পুনরায় চালু করার কোন অনুমতি নাই। অবৈধভাবে চালু করলে আবারও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইঁটভাটার দূষিত বায়ু ক্ষতিকর বিষয়ে নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.গোলাম সারোয়ার সরকার বলেন, মানুষের শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সমস্যা এবং চোখের রোগের মত জটিল রোগ হয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন, উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের “মা ব্রিকসে”র ইঁটভাটাটি অবৈধভাবে চালু করা হয়েছে এমন একটি অভিযোগ এলাকাবাসী কাছ থেকে পেয়েছি, অনুমতি ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া প্রশাসন গুড়িয়ে দেয়া ইঁটভাটা চালু করার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।